ছত্তিশগড়ে অপুষ্টির শিকার শিশুদের হুমকির মুখে ফেলছে বিজেপি

ভারতের ছত্তিশগড়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যাহ্নভোজে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের ডিম সরবরাহের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।  বিরোধী দল বিজেপির দাবি, এতে নিরামিষভোজী শিশুদের ডিম খেতে বাধ্য করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৫ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার মধ্যাহ্নভোজ থেকে ডিম বাদ দিয়েছিলেন। কবিরপন্থীরাও ডিম সরবরাহের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। তবে খাদ্য অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ও অ্যাক্টিভিস্টরা শিশুর পুষ্টির জন্য খাদ্য তালিকায় ডিম রাখার পক্ষে। সরকারের সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন বিধায়কও। 

midday-meals-for-government-schools-pradesh-madhya_692e5e08-a724-11e9-bdb2-acd0277ecbef

প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, ছত্তিশগড়ের ১৪ বছরের কম ৩৭ শতাংশ শিশুই অপুষ্টিতে ভুগছে। হয় তাদের ওজন কম, কিংবা শরীর স্বাভাবিক বাড়ন্ত নয়। নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর শিশুদের মধ্যে এই হার ৪৪ শতাংশ। পুষ্টি নিশ্চিতে চলতি বছর জানুয়ারিতে ভুপেশ ভাগেল নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যাহ্নভোজে ডিম যুক্ত করেন। আর নিরামিষভোজী শিশুদের ডিমের পরিবর্তে কলা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ঘটনার ছয় মাস পরে এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গত ১২ জুলাই প্রায় ৪০০ জন কবিরপন্থী কর্দা জেলা কালেক্টরের অফিসে একটি চিঠি দিয়ে খাবার থেকে ডিম বাদ দেওয়ার দাবি জানায়। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে মহাসড়ক অবরোধের হুমকি দেয় তারা। তাদের অভিযোগ, ডিমসহ এসব অনিরামিষভোজী খাবার তাদের রীতিবিরুদ্ধ। কবিরপন্থীদের প্রেসিডেন্ট এশওয়ারি সাহু বলেন, ‘আমরা আমাদের দুপুরের খাবারে ডিম চাই না। এটা আমাদের রীতিবিরুদ্ধ। ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে আমরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে দাবি জানাচ্ছি। না হলে আমরা আন্দোলনে নামবো। ’

সোমবার বিজেপিও কবিরপন্থীদের সমর্থন দেয়। তাদের দাবি, দুপুরের খাবারে ডিম দিলে তা সম্প্রীতি নষ্ট করবে, যেহেতু অনেকেই নিরামিষভোজী। ছত্তিশগড়ে বিজেপির মুখপাত্র সাচিনান্দ উপাসানে বলেন, সরকার জোর করে শিশুদের আমিষভোজী বানাচ্ছে। এটা অবশ্যই বন্ধ করা উচিত। বিজেপি এর তীব্র সমালোচনা করছে। বিজেপির এই দাবির জবাবে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, কোনও কিছুই জোর করে করা হচ্ছে ন। যেহেতু এখানে অপুষ্টি প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে, তাই শিশুদের ডিম সরবরাহ করা খুবই জরুরি।

বিধানসভার কয়েকজন সদস্য মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে এই ডিম সরবরাহ চালিয়ে যেতে বলেন। এছাড়া খাদ্য অধিকার নিয়ে কাজ করা ৩০টি এনজিওর পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, যেসব অভিভাবক তাদের সন্তানকে ডিম খেতে দিতে চান না, তাদের দুধ কিংবা কলা বিকল্প হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। তবে ডিম বাদ দেওয়া উচিত নয়।

সমাজকর্মী মমতা শর্মা অপুষ্টির পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, খাবার তালিকায় ডিম প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই তবে দেখতে পাবো ছত্তিশগড়ে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি বেড়েই চলেছে। তাদের একটি সুষম খাবার তালিকা প্রয়োজন, যেখানে ডিমও থাকবে। সেক্ষেত্রে যারা ডিম খায় তারা খাবে, এবং কেউ না চাইলে দেওয়া হবে না।