মুসলিম নারীকে আশ্রয় দিয়ে রোষানলে মুর্শিদাবাদের পুরোহিত পরিবার!

ক্ষমতাসীন বিজেপির সৃষ্টি করা সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার মধ্যেই এক মুসলিম নারীর প্রতি মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের এক পুরোহিত পরিবার। আর তাতেই গ্রামবাসীর রোষানলে পড়েছে তারা। গোটা পরিবারকে গ্রামবাসী একঘরে করে রেখেছে। পুরোহিতের জীবিকাও সংকটের মুখে।

nonameআনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের চোঁয়াতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সুভাষ রায়চৌধুরী নামের ওই পুরোহিত বাড়িতে বাড়িতে পূজা করে নিজের সংসার চালাতেন। কিছুদিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বিতাড়িত এক নারী সখিনা বিবিকে দুই নাবালক সন্তানসহ রাস্তায় অসহায়ভাবে বসে থাকতে দেখে আশ্রয় দেন তিনি। এতেই বাধে বিপত্তি। সখিনা ও তার সন্তানরা মুসলিম হওয়ায় গ্রামের অন্যরা বিষয়টা ভালো চোখে দেখেনি। এখন যেখানেই তিনি পূজা করতে যাচ্ছেন সবাই তাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলছেন, ‘না, ঠাকুরমশাই, আপনাকে আর আসতে হবে না!’

এ প্রসঙ্গে সুভাষ রায়চৌধুরী বলেন, ‘ঘরহারা একটা মেয়ে রাস্তায় এভাবে ঘুরছে, চোখ সইলো না। তাই মুসলিম হলেও দুটি নাবালক বাচ্চাসহ তাকে ঘরে ঠাঁই দিয়েছি। আমার কাছে ওটাই যে সবচেয়ে বড় ধর্ম’।

বাবার কথার সঙ্গে একমত কন্যা কাকলীও। বিবাহ বিচ্ছেদের পরে বাবার বাড়িতেই থাকেন তিনি। মূলত কাকলীই ওই মুসলিম নারীকে সন্তানসহ বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। তাতে সম্মতি ছিল তার বাবার। কাকলী বলেন, ‘আশ্রয়হীন এক নারী, তাকে দেখেও চোখ বুজে থাকবো?’ তিনি আরও বলেন, ‘বাবাকে এসে বললাম, সখিনাকে আমাদের বাড়িতে একটু জায়গা দাও না। বাবা রাজি হতেই নিয়ে এসেছি’। দুঃখের সঙ্গে কাকলী জানান, শুধুমাত্র সখিনা আর তার সন্তানদের সাহায্য করার অপরাধে গ্রামের লোকেরা তাদের একঘরে করে রেখেছে।

সুভাষের স্ত্রী ইলা বলেন, ‘আমরা তো এরমধ্যে কোনও অন্যায় দেখিনি। দুটি ছোট বাচ্চা ছেলেমেয়েকে নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো একটা মেয়েকে আশ্রয় দিয়েছি’। তার প্রশ্ন, ধর্ম কি মানবতার চেয়েও বড়?
গ্রামের লোকেরা সুভাষ রায়চৌধুরীকে একঘরে করলেও সখিনার পরিবার এখন রায়চৌধুরী পরিবারের অংশ হয়ে উঠেছে। ছেলেমেয়ে দুটিকে ভর্তি করা হয়েছে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে। কাকলী আর ইলার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ঘরের কাজ করছেন সখিনাও।

সখিনা জানান, পুরোহিতের বাড়িতে থাকলেও নিজের ধর্ম নিয়ে কখনই কোনও বাধা পাননি তিনি। সখিনা বলেন, ‘একবারের জন্যও আমার ধর্ম নিয়ে আপত্তি তোলেননি সুভাষবাবু। রোজাও রাখতে পারছি’।

সখিনা কিংবা পুরোহিত পরিবারের মধ্যে মানবতার এমন মেলবন্ধন তৈরি হলেও তা মানতে পারছেন না গ্রামের মাতব্বররা। চোঁয়া গ্রামের এক মাতব্বর বলেন, ‘ভিন্ন ধর্মের মানুষকে ঘরে রেখে কি পূজা করা যায়’? গ্রামের হর্তাকর্তাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও হার মানেননি সুভাষ। তিনি বলেন, ‘মেয়ের ওপর অত্যাচার হলে কী হয় সেটা আমি জানি। তাই সখিনাকে এ বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছি’। নিজের সিদ্ধান্তে অটল মানবদরদী এই পুরোহিত বলেন, ‘যত দিন না সখিনা ও তার ছেলেমেয়েদের কোনও ব্যবস্থা হয়, এখানেই থাকবে তারা’।

সুভাষের এই উদারতার কথা পৌঁছেছে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। স্থানীয় এক বিডিও কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ অসামান্য সাহস দেখিয়েছেন সুভাষ। আমরা সরকারের পক্ষে ওই পরিবারকে সবরকম সহযোগিতা করবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই গ্রামে গিয়ে আমরা কথা বলবো, মানুষকে বোঝাবো। তাদের বলবো, এটাই তো প্রকৃত ধর্ম’।