স্ত্রী হত্যায় দোষী সাব্যস্ত ব্রিটিশ বাংলাদেশি জালাল, বৃহস্পতিবার সাজা ঘোষণা

লন্ডনের আদালতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি জালাল উদ্দীন। পূর্ব লন্ডনের বাড়িতে স্ত্রী খুন হওয়ার একদিনের মাথায় আটক হন তিনি। নির্যাতন চালিয়ে হত্যার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।  সেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত জালালের সাজা ঘোষণা করা হবে বৃহস্পতিবার। 

হত্যার শিকার আসমা

হত্যাকাণ্ডের শিকার আসমার বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপ‌জেলার আটাঘর গ্রামে। সন্দেহভাজন হত্যাকারী সিলেটের জালাল উদ্দীন ক‌য়েক বছর আগে বিয়ে করে তাকে লন্ডনে নিয়ে যায়। পপলারের সিটি আইসল্যান্ড ওয়ের এক কাউন্সিল ফ্ল্যাটে থাকতো ওই বাংলাদেশি দম্পতি। হত্যাকাণ্ডের পর জানা যায়, দাম্পত্য কলহের একপর্যায়ে জালাল ভারী কোনও বস্তু দিয়ে আঘাত করলে আসমার মৃত্যু হয়। ঘটনার সময় ফ্ল্যাট‌টি‌তে কেবল আসমা আর জালালই ছিল। হাতে পাওয়া আলামতের ভিত্তিতে পুলিশ সে সময় জানিয়েছিল, স্বামী জালালের নির্যাতনেই আসমার মৃত্যু হয়েছে।

দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে শুনানিতে জালাল আদালতকে বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রী আসমার কাছে তার জুয়া আসক্তির বিষয়টি ধরা পড়ে যায়। এ নিয়ে কথাকাটাকাটির জেরে স্ত্রীকে হত্যা করেন তিনি। খুনের আগে আসমার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব থেকে ২০০ পাউন্ড তুলে নিয়েছিলেন জালাল। ‘স্ত্রী সন্তানের ব্যয় নির্বাহের জন্য একসময় জুয়াকেই পেশা হিসেবে নিয়েছিলাম’, আদালতকে জানান তিনি।
মামলার শুনানিকালে প্রসিকিউটর ড্যানিয়েল রবিনসন কিউসি আদালতকে বলেন, তিন সন্তানের জননী আসমা বেগমকে ৫৭ বার ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তিনি জানান, পোস্টমর্টেমের সময় ডাক্তারদের গুনতে কষ্ট হয়েছে ঠিক কতবার আসমাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।

জুয়া আসক্ত জালালের খেলায় টাকা খোয়ানো নিয়ে আগেও স্ত্রীর সঙ্গে কলহ হয়েছে। আসমাকে মারধরও করতেন তিনি। রবিনসন আদালতকে জানান, তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে জানা গেছে, ঘটনার আগের দিন আসমা এবং ঘাতক স্বামী জুয়া খেলায় টাকা খোয়ানো নিয়ে ঝগড়া করে। পরের দিন সকালে আবার ঝগড়া চলাকালে জালাল স্ত্রী আসমার ওপর ছুরি নিয়ে চড়াও হন এবং নৃশংসভাবে খুন করেন।

রেস্টুরেন্টে শেফের কাজ করা জালাল ধীরে ধীরে জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে পড়েছিল। প্রসিকিউটর জানান, লন্ডনের জুয়ার ঘর উইলিয়াম হিলের পূর্ব লন্ডনের একটি শাখায় নিয়মিত যেতেন তিনি। সেখানকার মানুষ তাকে ‘অ্যাংরি ইন্ডিয়ান’ বলে ডাকতো।

‌নিহত আসমা বেগমের স্বজনেরা এই প্রতিবেদককে জানান, জালাল ছিল পেশাদার জুয়াড়ি। খেলার অর্থ জোগাতে সে সন্তানদের চাইল্ড বেনিফিটের অর্থও তুলে নিতো। স্বামীকে জুয়া আসক্তি থেকে বের করে আনতে বহু চেষ্টা করেছেন স্ত্রী আসমা। শেষ পর্যন্ত নিজেই সেই আসক্তির বলি হয়েছেন।