জাপানে প্রথমবারের মতো আইনপ্রণেতা হলেন ‘গুরুতর বিকলাঙ্গ’ দুই রাজনীতিক

আইনপ্রণেতা হিসেবে জাপানে প্রথমবারের মতো শারীরিকভাবে ‘গুরুতর বিকলাঙ্গ’ দুই রাজনীতিবিদের অভিষেক হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ওই দুই বামপন্থী নেতাকে করতালির মধ্য দিয়ে  পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ সিনেটে স্বাগত জানানো হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ইয়াসুহিকো ফুনাগো ও এইকো কিমুরা নামের ওই দুই ব্যক্তির শরীরের বড় অংশই অচল। অন্যদের সাহায্য নিয়ে কাজ করতে হয় তাদের।

এইকো কিমুরা ও ইয়াসুহিকো ফুনাগো
জাপানের মন্ত্রিপরিষদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী সেদেশে ৯৬ লাখ ৩০ হাজার প্রতিবন্ধীর বসবাস। গত মাসে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন ইয়াসুহিকো ফুনাগো ও এইকো কিমুরা। তাদের নির্বাচিত হওয়াকে জাপানে প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।  বৃহস্পতিবার যখন তারা পার্লামেন্টের গেইট দিয়ে প্রবেশ করছিলেন তখন সমর্থকরা তাদের অভিবাদন জানান।

৬১ বছর বয়সী ইয়াসুহিকো ফুনাগো ২০০০ সালে স্নায়ু রোগে আক্রান্ত হন। তখন থেকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ নড়াচড়া করানোর সক্ষমতা হারাতে থাকেন তিনি। বর্তমানে অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরসিস (এএলএস) নামক রোগে ভুগছেন ফুনাগো। এ রোগের আরেক নাম লৌ গেহরিগ’স। কম্পিউটার ব্যবস্থা ব্যবহার করে কিংবা দেখভালকারীর সহায়তায় যোগাযোগের কাজ চালিয়ে থাকেন তিনি। এইকো কিমুরা ভুগছেন সেরিব্রাল প্যালসি নামক রোগে। কেবল ডান হাত ছাড়া গলার নিচ থেকে শরীরের পুরো অংশই তার অচল।

বামপন্থী দল রেইওয়া শিনসেনগুমি থেকে পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করছেন ইয়াসুহিকো ফুনাগো ও এইকো কিমুরা নামের ওই দুই নেতা। অভিনেতা থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া তারো ইয়ামামোতো হলেন রেইওয়া শিনসেনগুমি দলটির প্রতিষ্ঠাতা। জাপানের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় যেসব মানুষ আড়ালে থেকে যান তাদেরকে সামনে নিয়ে আসার লক্ষ্যে প্রচারণা চালিয়ে থাকে রেইওয়া শিনসেনগুমি। দলটি থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি সিংগেল মা-বাবা ও খণ্ডকালীন চাকরিজীবীরাও ছিলেন। নির্বাচনে ছোট এ দলটি জয় পেয়েছে দুইটি আসনে। প্রত্যক্ষ ভোটে জয় পেয়েছেন ইয়ামামোতো। আর সিনেটের আংশিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার আওতায় ফুনাগো ও কিমুরাকে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জাপানের সিনেটের হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী আইনপ্রণেতা পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। তবে ইয়াসুহিকো ও কিমুরা হলেন প্রথম আইনপ্রণেতা যারা গুরুতরভাবে বিকলাঙ্গ। ইয়াসুহিকো ও কিমুরার অভিষেক উপলক্ষে পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ সিনেটকে সবার জন্য ব্যবহার উপযোগী করে সংস্কার করা হয়েছে। রাখা হয়েছে হুইলচেয়ার বসানোর মতো জায়গা। পার্লামেন্ট অধিবেমন চলার সময় ভেতরে যেন তাদের তত্ত্বাবধানকারীরা উপস্থিত থাকতে পারেন তা নিশ্চিত করতে বিধিমালায় পরিবর্তনও আনা হয়।