হংকং-এ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণ

হংকং-এ গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে এ সংঘর্ষে পুলিশের শটগান থেকে বিনব্যাগ গুলি ও পিপার স্প্রে ব্যবহার হয়েছে। মং কক ও প্রিন্স এডওয়ার্ড মেট্টো পুলিশ স্টেশনের বাইরের এ সংঘর্ষে আহত হয়ে দুইজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মধ্য জুনে আন্দোলন শুরুর পর থেকেই অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে পুলিশ। তবে সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করেনি তারা। স্থানীয় সম্প্রচারমাধ্যম আরটিএইচকে’কে উদ্ধৃত কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।b63bc2b1e02e4efe88f241781f47c14a_18

এক সময়কার ব্রিটিশ কলোনি হংকং এখন চীনের অংশ। ‘এক দেশ, দুই নীতি’র অধীনে কিছু মাত্রায় স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে হংকং। অঞ্চলটির নিজস্ব বিচার ও আইন ব্যবস্থা রয়েছে, যা মূল চীনের চেয়ে ভিন্ন। গত ৯ জুন থেকে সেখানে কথিত অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের আশঙ্কা, ওই বিল অনুমোদন করা হলে ভিন্নমতাবলম্বীদের চীনের কাছে প্রত্যর্পণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। লাখো মানুষের উত্তাল গণবিক্ষোভের মুখে এক পর্যায়ে ওই বিলকে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা দেন হংকংয়ের চীনপন্থী শাসক ক্যারি ল্যাম। তবে এতে আশ্বস্ত হতে না পেরে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে সেখানকার নাগরিকরা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হংকংয়ের স্বাধীনতা, বৃহত্তর গণতন্ত্র ও চীনের নিযুক্ত নির্বাহী প্রধানের পদত্যাগের দাবি।

মঙ্গলবার রাতে সংঘর্ষের ঘটনার টেলিভিশন ফুটেজের ভিডিওতে দেখা গেছে, হংকং-এর মং কক ও প্রিন্স এডওয়ার্ড মেট্টো পুলিশ স্টেশনের বাইরে গণতন্ত্রপন্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেখানে মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরিহিত এক আন্দোলনকারীকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

কোয়াং ওয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র জানিয়েছেন, মঙ্গলবার শেষরাতে তিন জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের বয়স ২১ থেকে ৪২ এর মধ্যে। তিনি বলেন, প্রিন্স এডওয়ার্ড স্টেশনের বাইরের দুইজনকে স্ট্রেচারে করে আনা হয়েছে। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল। আর অন্য একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনকারীদের গ্রুপগুলোতে ব্যাপকভাব ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক বিক্ষোভকারীকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, এটাই পুলিশি বর্বরতার প্রমাণ। অবশ্যই এর তদন্ত হওয়া দরকার।

আন্দোলনের শুরু থেকেই অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে পুলিশ। তবে মঙ্গলবার রাতের এই সংঘর্ষের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করেনি তারা। স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন করা হবে বলে জানিয়েছে হংকং পুলিশ।

আন্দোলন অব্যাহত রেখে চলমান সংকট সমাধানের জন্য হংকংয়ের নেতা ক্যারি লামের ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে। গত সপ্তাহে তিনি ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপের সঙ্গে আলোচনায় বলেছেন, ‘এই সংকট সমাধানের জন্য খুবই সীমিত ক্ষমতা আছে আমার।’

মঙ্গলবার লাম বলেন, তিনি কখনওই তার পদত্যাগের ব্যাপারে চীনের সঙ্গে আলোচনা করেননি। ধারণা করা হচ্ছে তার সরকার বেইজিংয়ের সহায়তা ছাড়াই এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে। তবে হংকং সংকট নিয়ে কোন ধরনের সমঝোতায় যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মঙ্গলবার আবারও এ বিষয়ে সতর্ক করেছে বেইজিং। চীন জানায়, ‘এই বিশৃঙ্খলা দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হলে তারা অলসভাবে বসে থাকবে না।’