৯/১১ হামলায় সহায়তাকারী সৌদি কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করবে যুক্তরাষ্ট্র

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সমন্বিত সন্ত্রাসী হামলায় সহায়তাকারী সৌদি কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করবে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের সম্পর্কে টানাপড়েন এবং হামলার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের চাপের মধ্যে ওই নাম প্রকাশ করতে যাচ্ছে দেশটি। বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানায় মার্কিন বিচার বিভাগ। তবে ওই নাম বা তথ্য প্রকাশ্যে জানানো হবে না। ন্যায়বিচার বা ক্ষতিপূরণ পেতে সহায়তা বা মামলা করতে সহায়তার করার জন্য আক্রান্ত পরিবারের আইনজীবীদেরকে জানানো হবে।Capture

২০০১ সালের ১‌১ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় যুক্তরাষ্ট্র। হামলার কবলে পড়ে বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষার দুই মার্কিন ক্ষমতাকেন্দ্র ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগন। যা ইতিহাসে ৯/১১ হামলা নামে পরিচিত। এ নিয়ে ২০০২ সালে সম্পন্ন হওয়া ৮৩৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের ২৮ পৃষ্ঠা গোপন রাখা হয় ২০১৫ সাল পর্যন্ত। সৌদি আরবকে বাঁচানোর প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বুশ ও ওবামা প্রশাসন তা গোপন রাখে। প্রবল জনচাপের মুখে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি প্রতিবেদনের অবশিষ্ট ২৮ পৃষ্ঠা প্রকাশিত হয়। বেশকিছু পরিবর্তনসহ ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলেও এতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সৌদি আরবের সংশ্লিষ্টতার আলামত পাওয়া যায়। এদিকে হামলাকারীদের ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই ছিল সৌদি নাগরিক। অবশ্য, সৌদি কর্তৃপক্ষ বরাবরই হামলায় সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে আসছে।

২০১২ সালে ওই হামলা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থ এফবিআই। ওই সময় তারা জানায়, ফাহাদ আল-থুমাইরি ও ওমর আল-বায়ুমির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে তারা। তাদের বিরুদ্ধে হামলাকারীদের সহায়তার অভিযোগ রয়েছে। হামলার সময় তারা যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি দূতাবাসে সংযুক্ত ছিলেন। কিন্তু এই দুই সৌদি কর্মকর্তা ছিনতাইয়ে যুক্ত ছিলেন বলে যে দাবি করা হয়েছিল পরবর্তী তদন্তে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে তৃতীয় এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়, যিনি তাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয় নামটি গোপন রাখা হয়েছে। এখন ওই তৃতীয় নামটি প্রকাশ করতে যাচ্ছে মার্কিন বিচার বিভাগ।

হামলায় সহায়তাকারী সৌদি কর্মকর্তার নাম প্রকাশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে গত মাসখানেক ধরে প্রচার চালিয়ে আসছে আক্রান্তদের পরিবার। ট্রাম্পকে লেখা সর্বশেষ এক চিঠিতে পরিবারগুলো জানায়, ওই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করলে পূর্ণ সত্য জানা ও সৌদি আরবের কাছ থেকে ন্যায়বিচার বা ক্ষতিপূরণ পাওয়া সহজ হবে।

২০০৪ সালে ৯/১১ হামলার বিষয়ে কংগ্রেসের তদন্ত কমিটি জানিয়েছিল, আল-কায়েদাকে ওই হামলায় সহায়তা করতে সৌদি অর্থায়ন করেছে এমন কোনও প্রমাণ পায়নি তারা।

মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার সৌদি ওই কর্মকর্তার নাম চিহ্নিত করেছেন। পরে বৃহস্পতিবার ওই নাম প্রকাশের সীদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির বিচার বিভাগ। তবে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে এমন কিছু বা আক্রান্ত পরিবারের সঙ্গে যেন ওই ব্যক্তির পরিচয় যেন আইনজীবীরা প্রকাশ না করেন এমন সীদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি।

ভুক্তভোগীদের পরিবারের আইনজীবীরা জানিয়েছে, ২০১২ সালে এফবিআই’র প্রতিবেদনে প্রকাশিত সৌদি দুই কর্মকর্তার থেকেও সম্ভবত ওই ‘অচিহ্নিত’ ব্যক্তি আরও উচ্চ পদস্থ সৌদি কর্মকর্তা হবেন। আক্রান্ত পরিবারগুলো মার্কিন বিচার বিভাগের ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।