বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাকে আরসা সন্দেহে গ্রেফতার

বাংলাদেশ থেকে সম্প্রতি যে ২৬ রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপে ফিরে গেছে, তাদের একজনকে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশান আর্মির (আরসা) সদস্য সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিয়ানমানের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি জানিয়েছে, সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতারের কথা নিশ্চিত করেছেন রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার জেলা প্রশাসক উ সো অং।

Capture

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাত লাখেরও বেশি মানুষ। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে জাতিগত নিধন ও গণহত্যার আলামত। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতেও কোনও কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি সু চি’র নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকার। বরং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কোনও অগ্রগতি না হওয়ার দায় বাংলাদেশের ওপর চাপিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয়ও অস্বীকার করে আসছেন তিনি। এমন বাস্তবতায় গত আগস্টে মিয়ানমার সরকার বলেছিলো যে, তারা ৩,৪৫০ রোহিঙ্গাকে ফিরে আসার ব্যাপারে সম্মত। ওই সময় কেউ ফিরে আসেনি। তবে সম্প্রতি ফিরে যাওয়া ২৬ ব্যক্তির কেউ প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী সেখানে যায়নি।

জেলা প্রশাসক উ সো অং বলেন, ‘তাউংপিও লেটউয়ি দিয়ে তিনটি পরিবারের ২৬ জন মানুষ স্বেচ্ছায় মংডুতে ফিরে এসেছে। আমরা তাদেরকে যাচাই করেছি এবং দেখতে পেয়েছি যে,  তাদের একজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা রয়েছে। তাই আমরা তাকে আটক করেছি। কিন্তু অন্যদের আমরা ফিরে আসার জন্য সহায়তা দিয়েছি।’

২০১৭ সালে মংডুতে আরসা যে ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছিল, তখন ওই হামলায় জড়িত সন্দেহভাজনদের ছবি ও নামসহ তাদের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে সরকার। উ সো অং বলেন, যারা স্বেচ্ছায় ফিরে আসছেন,  আইন ও নীতি অনুযায়ী তাদের তথ্যের সাথে সরকারের সংরক্ষিত নথি মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২৭০ জন স্বেচ্ছায় ফিরে এসেছেন।

মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে, সেই হিসেবের বাইরেই ফিরে গেছেন তারা। তারা হয় নৌকাতে, না হয় পায়ে হেঁটে সীমান্ত পার হয়ে গেছেন।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফিরে আসা ব্যক্তিদের মানবিক ও পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যেটা নির্ধারণ করেছে অফিস অব দ্য ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ ফর হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাসিস্টেন্স, রিসেটলমেন্ট অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট ইন রাখাইন (ইউইএইচআরডি)। তাদের আত্মীয়-স্বজন যেখানে বাস করে, সেখানে তাদেরকে পুনর্বাসিত করা হচ্ছে।

যারা আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরবে,  তাদের জন্য সরকার দুটো অভ্যর্থনা কেন্দ্র খুলেছে, কিন্তু দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অধীনে এখন পর্যন্ত কেউ ফিরে আসেনি। মিয়ানমার ও বাংলাদেশ একমত হয়েছে যে, ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, সেই চুক্তির শর্ত মেনেই প্রত্যাবাসন কর্মসূচি কার্যকর করা হবে।

সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর।