খাশোগির একাধিক খুনি ‘দায়মুক্তি’ উপভোগ করছে: এরদোয়ান

সাংবাদিক জামাল খাশোগির একাধিক খুনিকে সৌদি আরব ‘দায়মুক্তি’ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। রবিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা এক নিবন্ধে তিনি এমন অভিযোগ করেন।
এরদোয়ান বলেন, ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে সংঘটিত নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ঘটনা বের করে আনতে তুরস্ক তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। দৃশ্যত এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কিছু খুনি বিচার এড়িয়েছে। সৌদি আরবে তারা দায়মুক্তি উপভোগ করছে।

তিনি বলেন, তুরস্ক এখনও এটা জানতে চায় খাশোগির মরদেহ কোথায় রাখা হয়েছে? কার নির্দেশে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে?

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় এজেন্টরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে ইঙ্গিত দেন এরদোয়ান। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে বরাবরই যার নাম এসেছে তিনি হচ্ছেন এমবিএস নামে পরিচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিবিএস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই নির্দেশের কথা অস্বীকার করেন এমবিএস। তবে সৌদি নেতা হিসেবে এর দায় তার ওপর বর্তায় বলে স্বীকার করেন তিনি।

এমবিএস অস্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্বাস, তার নির্দেশেই ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

এরদোয়ান বলেন, খুনিরা সৌদি আরব থেকে কূটনৈতিক পাসপোর্টে তুরস্কে এসেছিল। তারা একটি কূটনৈতিক ভবনকে অপরাধের কেন্দ্রে পরিণত করেছে। এর চাইতেও ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, এর সঙ্গে জড়িত কিছু খুনিকে সৌদি আরব দায়মুক্তি দিয়েছে। খুনিরা দায়মুক্তি উপভোগ করছে।

তিনি বলেন, আঙ্কারা রিয়াদকে বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করে। তবে তার মানে এই নয় যে, তুরস্ক তার মাটিতে এ ধরনের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চুপ করে থাকবে।

এরদোয়ান বলেন, ইস্তানবুলের ওই কনস্যুলেটে সৌদি আরবের ১৫ সদস্যের খুনি স্কোয়াড প্রবেশ করেছিল। তারা খাশোগির মরদেহ টুকরো টুকরো করেছে।

২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে আঙুল ওঠে খোদ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে প্রথমে এ হত্যাকাণ্ডের খবর অস্বীকার করা হয়। পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্বীকার করলেও এর সঙ্গে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সম্পৃক্ততার খবর অস্বীকার করা হয়। ওই ঘটনায় দুনিয়াজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েন এমবিএস নামে পরিচিত মোহাম্মদ বিন সালমান।

তুরস্কের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ওই হত্যাকাণ্ডের অডিও রেকর্ডিং সংগ্রহে সমর্থ হয়েছে। এতে হত্যার ঠিক আগে খাশোগি ও ১৫ সদস্যের কিলিং স্কোয়াডের মধ্যকার কথোপকথনের চূড়ান্ত মুহূর্তের অডিও অনুলিপি প্রকাশ পেয়েছে। এতে দেখা যায়, সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগির প্রবেশের সময় এক কর্মকর্তা তাকে অভিবাদন জানান। পরে টেনে তাকে একটি রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সৌদি গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও যুবরাজ এমবিএসের দেহরক্ষী মাহের আব্দুল আজিজ মুদরিব বলেন, ‘অনুগ্রহ করে বসুন। আপনাকে আমাদের (রিয়াদ) ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ইন্টারপোল থেকে একটা নির্দেশ আছে। আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে ইন্টারপোল। আমরা এখানে এসেছি আপনাকে নিয়ে যেতে।’ খাশোগি জবাবে বলেছিলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই। আমার বাগদত্তা বাইরে অপেক্ষা করছেন।’

খাশোগিকে হত্যার ১০ মিনিট আগে মুদরিব তাকে অনুরোধ করেছিলেন ‘তার ছেলেকে চলে যাওয়ার জন্য বার্তা পাঠাতে।’ তাকে আরও বলা হয়, যদি তিনি না পৌঁছান তাহলে উদ্বিগ্ন না হতে। খাশোগি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর মুদরিব বলেন, ‘এটা লিখুন জনাব জামাল। দ্রুত করুন। আমাদের সহায়তা করুন তাহলে আমরাও আপনাকে সহায়তা করবো। কারণ, শেষে আপনাকে সৌদি আরবে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো আমরা। যদি সহায়তা না করেন তাহলে আপনি জানেন ঘটনাটা কী ঘটবে।’

কর্মকর্তারা তখন সৌদি সাংবাদিকের ওপর ওষুধ/ড্রাগ প্রয়োগ করে। জ্ঞান হারানোর আগে তার শেষ কথা ছিল, ‘আমার অ্যাজমা আছে। তোমরা আমাকে শ্বাসরোধ করতে যাচ্ছো, এটা করো না।’ এরপরই তাকে হত্যা করা হয়। সাংবাদিক জামাল খাশোগির মৃতদেহটিও আর পাওয়া যায়নি।