মৃত্যুর ১৪ বছর পর সমাহিত হলেন চীনের বহিষ্কৃত কমিউনিস্ট নেতা

১৯৮৯ সালের ছাত্র আন্দোলনে বলপ্রয়োগের বিরোধিতা করেছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ঝাও জিয়াং। ঘটনার পর তাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল দল থেকে। ২০০৫ সালে মারা যান ঝাও। মৃত্যুর পর তাকে রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় কবরস্থানে সমাহিত করতে দেয়নি চীনা শাসকেরা। ১৪ বছরের ব্যবধানে গতকাল (১৮ অক্টোবর, শুক্রবার) রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতির পর বেইজিংয়ের চাওপিং এলাকার তিয়ানসৌ গার্ডেন কবরস্থানে তার দেহভস্ম সমাহিত করা হয়েছে। একই সময় সমাহিত করা হয় তার স্ত্রীর দেহভস্মও।১৯৮৯ সালের মে মাসে শিক্ষার্থীর উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ঝাও ঝিয়াং

১৯৮৯ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দেশ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকর্তাদের অনুমোদনক্রমে ছাত্র বিক্ষোভে বলপ্রয়োগের ঘটনায় শত শত শিক্ষার্থী নিহত হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, চীনের ইতিহাস থেকেও এই বিক্ষোভ মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। ছাত্রবিক্ষোভে বলপ্রয়োগের বিরোধিতার পর ঝাও জিয়াংকে পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। তখন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গৃহবন্দি ছিলেন তিনি।

শুক্রবার ঝাও-এর দেহভস্ম সমাহিত করার অনুষ্ঠানে কেবলমাত্র পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের উপস্থিত থাকতে দেওয়া হয়। শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থকদের ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। ঝাওয়ের মেয়ে ওয়াং ইয়ানান বলেন, আজ পারিবারিক শেষকৃত্যের পাশাপাশি বাবা-মাকে সমাহিত করছি। পারিবারিক আবহে ছোট একটি অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। এই শেষকৃত্যের কথা আগেভাগে ঘোষণা না করায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চিত ছিলেন তারা।ঝাও জিয়াংয়ের সমাধিস্থল

ঝাও ঝিয়াংকে সামনের কাতারে নিয়ে আসেন চীনের সাবেক সর্বোচ্চ নেতা দেং জিয়াওপিং। অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে বাইরের পৃথিবীর কাছে নিজ দেশের বাজারকে উন্মুক্ত করতে সক্ষম নতুন নেতা খুঁজতে গিয়ে তিনি ঝাও ঝিয়াংকে পান। ১৯৮৭ সালে তাকে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বানানোর পর তার অবস্থান সুনিশ্চিত বলেই বিবেচিত হচ্ছিল। তবে দুই বছর পর শিক্ষার্থী আর বেইজিং এর বাসিন্দাদের এক বিক্ষোভে দলের অভ্যন্তরের বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

১৯৮৯ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি নিয়ে বেইজিং-এর তিয়েনমেন স্কয়ারে শান্তিপূর্ণন বিক্ষোভে জড়ো হয় লাখ লাখ মানুষ। বিক্ষোভ মোকাবিলায় উদার মনোভাবের পরিচয় দেওয়ার পক্ষে ছিলেন ঝাও জিয়াং। তবে বিক্ষোভ দমনে সেনা মোতায়েনের পক্ষে ছিলেন দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য। দেং জিয়াওপিং তখন সেনা অভিযানের নির্দেশ দিয়ে এক সময়কার প্রিয়পাত্র ঝাও জিয়াংকে আটক করেন।

সাধারণত ব্যাপক আড়ম্বরে চীনের রাষ্ট্রীয় নেতাদের শেষকৃত্য হয়ে থাকে। ২০০৫ সালে ঝাও জিয়াং মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের পক্ষ থেকেও শেষকৃত্যও রাষ্ট্রীয় নেতা, সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের মতো করেই আড়ম্বরে করার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে কর্মকর্তারা তার দেহভস্ম সমাহিত করতে দেওয়ার অনুমতি দেয়নি। বাধ্য হয়ে তার দেহভস্ম বাড়ি নিয়ে যায় পরিবারের সদস্যরা। তবে অনেক বছর ধৈর্য্য ধারণের পর অবশেষে তার সন্তানেরা বাবা-মাকে একসঙ্গে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।