বাগদাদির মরদেহ কোথায়?

সিরিয়ার ইদলিবের তুরস্ক নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্সের অভিযানে আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদির মৃত্যুর মার্কিন দাবি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মার্কিন সংবাদমাধ্যমের ধারাবাহিকতায় হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকেও রবিবার দাবি করা হয়, শনিবার মার্কিন অভিযান চলাকালে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছেন বাগদাদি। তবে স্বাধীন কোনও সূত্র থেকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রাশিয়া এরইমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই যদি বাগদাদির মৃত্যু হয়ে থাকে, তাহলে তার মরদেহ কোথায় রয়েছে।


যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতরের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, শনিবার মার্কিন অভিযান চলাকালে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিজেকে উড়িয়ে দেয় বাগদাদি। তবে দুই সূত্রই সিএনএন-কে জানিয়েছে, ডিএনএ ও বায়োমেট্রিক পরীক্ষার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে প্রকৃতপক্ষে ওই ব্যক্তিই আবু বকর আল বাগদাদি কিনা। পরে হোয়াইট হাউজের তরফ থেকে দাবি করা হয়, মার্কিন বাহিনীর অভিযানের মুখে বাগদাদি আত্মঘাতী বিস্ফোরণে তিন সন্তানসহ নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছেন।  
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন 'বিষয়টি সম্পর্কে অবগত' একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে দাবি করেছে, বাগদাদির মরদেহ হয়তো সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এনবিসি নিউজ-এর মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও ব্রায়েন বলেন, তার মরদেহ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, সেটি যথাযথভাবেই নিষ্পত্তি করা হবে। ২০১১ সালে পাকিস্তানে অভিযান চালিয়ে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। পরে তার মরদেহ সাগরে নিক্ষেপ করা হয়। বাগদাদির পরিণতিও কি একই রকমের হবে? এনবিসি নিউজ-এর এমন প্রশ্নের উত্তরে রবার্ট ও ব্রায়েন বলেন, এক্ষেত্রেও আমি এটাই আশা করি।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, শনিবার রাতে সিরিয়ার ইদলিবে নিখুঁত অভিযান চালানো হয়েছে। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনীর রাত্রিকালীন ওই অভিযান ছিল বিপজ্জনক ও দুঃসাহসিক। ট্রাম্প বলেন, ‘আইএস নেতা সারা পথ কাঁদতে কাঁদতে শেষ পর্যন্ত একমুখ বন্ধ একটি টানেলের মধ্যে ঢুকে মারা গেলো। আত্মঘাতী বেল্ট পরে সে নিজেকে ও তার তিন শিশুকে হত্যা করলো। কুকুরের মতো, কাপুরুষের মতো মারা গেলো। এখন পৃথিবী তুলনামূলক বেশি নিরাপদ।’
প্রসঙ্গত এর আগেও কয়েকবার বাগদাদির নিহত হওয়ার খবর দেওয়া হয়েছিল। রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওলেগ সিলোমলোটভ ২০১৭ সালে দাবি করেছিলেন, ওই বছরের মে মাসের শেষ দিকে সিরিয়ার রাকা শহরের কাছে রাশিয়ার বিমান হামলায় ‘খুব সম্ভবত’ বাগদাদি নিহত হয়েছেন। এছাড়া, লন্ডনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসও নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে বাগদাদির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে। পাশাপাশি আইএস-এর কথিত বার্তা সংস্থা আমাক এজেন্সিও ইতোপূর্বে বাগদাদির মৃত্যুর খবর প্রচার করেছিল। তবে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইরাকি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, এখনও বেঁচে আছেন এ জঙ্গি নেতা। তখন সিরিয়ার একটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা নেওয়ার খবরও দেয় সংবাদমাধ্যমটি। সর্বশেষ শনিবার মার্কিন অভিযানে তার নিহতের খবর এলো।
সূত্র: সিএনএন, এনবিসি।