ইরাকে মাসখানেক ধরে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যেই রবিবার রাতে দেশটির কারবালা ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালানো হয়েছে। তবে এতে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আল জাজিরা-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডজনখানেক বিক্ষোভকারী এ হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভকারীরা কনস্যুলেট ভবনে উড্ডয়নরত ইরানি পতাকা সরিয়ে নামিয়ে ফেলে সেখানে একটি ইরাকি পতাকা উড্ডীন করে দেয়।
গত ১ অক্টোবর থেকে কর্মসংস্থানের সংকট, নিম্নমানের সরকারি পরিষেবা এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বাগদাদের রাজপথে নামেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক দলের অনুসারী না হয়েও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে অনিয়মের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের আওয়াজ নিয়ে রাজপথে নামেন আন্দোলনকারীরা। নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ও গুলি চালিয়ে তাদের ওপর চড়াও হলে এই বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে ওঠে, ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন শহরে। বিশেষ করে শিয়া অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করে। কর্মসংস্থানের সংকট ও দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভ শুরু হলেও সেটি এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
সরকারি হিসাবেই বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ২৫০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আট হাজারেরও বেশি মানুষ। এসব হতাহতের ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবর্ষণকেই দায়ী করছে ইরাকের মানবাধিকার সংস্থা।
গত কয়েক মাস ধরে বাগদাদের দুই মিত্র ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। ইরাকের রাজনীতি ও সামরিক ক্ষেত্রে এই দুই দেশেরই প্রভাব রয়েছে। ফলে বহু ইরাকি নাগরিকের আশঙ্কা, আঞ্চলিক প্রভাবের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিরোধের মাঝে পড়ে যেতে পারে বাগদাদ। বিক্ষোভকারীরা এখন বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে।
রবিবারের বিক্ষোভে ইরানি কনস্যুলেট আক্রান্ত হওয়ার খবর দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতেও স্বীকার করা হয়েছে। ইরানভিত্তিক পার্স টুডে জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে একদল দুর্বৃত্ত কারবালায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়েছে। তবে এত কনস্যুলেটের বড় ধরনের কোনও ক্ষতি হয়নি।
ইরাকের নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, হামলার পর কনস্যুলেটের নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যে এই কূটনৈতিক মিশনের চারপাশে চার ব্যাটালিয়ান সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, কারবালার দক্ষিণে একটি রাস্তার মোড়ে অবস্থিত ভবনটির চারপাশে পাথর নিক্ষেপকারী এবং টায়ার জ্বালানো বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে নিরাপত্তা বাহিনী।
তেলসমৃদ্ধ নগরী বসরার কাছে প্রধান উপসাগরীয় বন্দর উম্মে কাসারগামী সব সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এর ফলে গত বুধবার থেকে বন্দরের কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।
অব্যাহত গণবিক্ষোভের মুখে সম্প্রতি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন শিয়া নেতা মুকতাদা আল-সদর। এক বিবৃতিতে সরকারকে পদত্যাগ করে আগাম নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান তিনি। আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আইনপ্রণেতাদের পার্লামেন্ট অধিবেশন বয়কটের আহ্বান জানান এ শিয়া নেতা। তবে বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞের মধ্যেই ইরাক সরকারের পক্ষে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে ইরান।
ইরাকজুড়ে দুর্নীতি ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভকে অস্থিতিশীলতা তৈরির চক্রান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছে তেহরান। ইরানের স্পিকারের উপদেষ্টা হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন,এই চক্রান্তের পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। তারা ইরাকি জনগণের কিছু যৌক্তিক দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতির অপব্যবহার করছে। এসবের মধ্য দিয়ে তারা ইরাক সরকারের পতন ঘটাতে চায়। সূত্র: আল জাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি, পার্স টুডে।