ইরানের বিরুদ্ধে ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অভিযোগ জাতিসংঘের

ইরানের বিরুদ্ধে দেশটির ভূগর্ভস্থ পরমাণু স্থাপনা ফোরদু-তে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালুর অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ। সোমবার প্রকাশিত জাতিসংঘের আওতাধীন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর এক প্রতিবেদনে এমন অভিযোগ তোলা হয়। এই কর্মসূচি পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে স্বাক্ষরিত দেশটির পরমাণু চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
আইএইএ বলছে, গত ৯ নভেম্বর থেকে ভূগর্ভস্থ পরমাণু স্থাপনা ফোরদু-তে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রেখেছে ইরান। ফলে দেশটির সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ বেড়েই চলছে।

এর আগে গত ৫ নভেম্বর ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি দেশটির পরমাণু সমৃদ্ধকরণের কাজ পুনরায় শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই সময়ে তেহরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, আইএইএ-এর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই পারমাণবিক স্থাপনার সেন্ট্রিফিউজে ইউরেনিয়াম গ্যাস ঢোকানোর কাজ শুরু হয়েছে।

সোমবার আইএইএ-এর অভিযোগের পর ইরানের এ সংক্রান্ত দাবির সত্যতা মিললো। ইরানের দিক থেকে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যাওয়ায় তারাও এ নিয়ে চতুর্থ দফায় ওই সমঝোতা ভেঙ্গেছে। চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হলে ধাপে ধাপে ওই সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাবে তেহরান।

এদিকে ইরানের এমন পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সোমবার (১১ নভেম্বর) ব্রাসেলসে ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর এর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা ফেডেরিকা মোগেরিনি এই উদ্বেগের কথা জানান। এ সময় তিনি ইরানকে ২০১৫ সালের ওই চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

২০১৫ সালের জুনে ভিয়েনায় নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন (পি-ফাইভ) ও জার্মানি (ওয়ান) ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে। ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে ২০১৮ সালের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর নভেম্বরে থেকে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল শুরু করে ওয়াশিংটন। এর পর থেকে ইরান তাদের প্রতিশ্রুতি পর্যায়ক্রমে হ্রাস করছে। সম্প্রতি চতুর্থ দফা পদক্ষেপ নিয়েছে তেহরান। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানি।

মোগেরিনি বলেন, ‘ইরান তার ফোরদু স্থাপনায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে মনে হচ্ছে দেশটি পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যেতে চায়, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়।’

তিনি বলেন, ইউরোপ এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ’র প্রতিবেদনের অপেক্ষা করছে। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরমাণু সমঝোতায় স্বাক্ষরকারী তিন ইউরোপীয় দেশ ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানি এবং ইইউ তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবে।

লুক্সেমবার্গের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন অ্যাসেল বোর্ন ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নিষেধাজ্ঞার তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ইরান সম্পর্কে আইএইএ-র প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার আগে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।