হংকং-এর সহিংসতায় ‘গভীর উদ্বেগ’ যুক্তরাষ্ট্রের

হংকংয়ে ক্রমবর্ধমান সহিংসতায় ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারী উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মর্গান ওর্তেগাস এক বিবৃতিতে নিজ দেশের এমন উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গভীর উদ্বেগের সঙ্গে হংকং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।’ এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি।noname
বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষের সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারী সব পক্ষকেই আমরা শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

সোমবার হংকংয়ে পুলিশ কর্তৃক দুই বিক্ষোভকারীকে গুলিবর্ষণের পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ বিবৃতি এলো। বিবৃতিতে হংকং-এর কর্তৃপক্ষকে অঞ্চলটির বাসিন্দা ও বিক্ষোভকারীদের উদ্বেগ প্রশমনে তাদের সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে কর্তৃপক্ষের তরফে এমন উদ্যোগ এলে তাতে সাড়া দিতে আন্দোলনকারীদের প্রতিও আহ্বান জানানো হয়েছে।

এক সময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকং এখন চীনের অংশ। ‘এক দেশ, দুই নীতি’র অধীনে কিছু মাত্রায় স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে হংকং। অঞ্চলটির নিজস্ব বিচার ও আইন ব্যবস্থা রয়েছে, যা মূল চীনের চেয়ে ভিন্ন। গত ৯ জুন থেকে সেখানে কথিত অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের আশঙ্কা, ওই বিল অনুমোদন করা হলে ভিন্নমতাবলম্বীদের চীনের কাছে প্রত্যর্পণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। লাখো মানুষের উত্তাল গণবিক্ষোভের মুখে একপর্যায়ে ওই বিলকে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা দেন হংকংয়ের চীনপন্থী শাসক ক্যারি ল্যাম। তবে এতে আশ্বস্ত হতে না পেরে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে সেখানকার নাগরিকরা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হংকংয়ের স্বাধীনতার দাবি। সর্বশেষ গত ৮ নভেম্বর বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের গুলিতে আহত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে অঞ্চলটির গণতন্ত্রপন্থীদের চীনবিরোধী বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এরমধ্যেই সোমবারের বিক্ষোভে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। হংকংয়ে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটলো।

ফেসবুক লাইভের ভিডিওতে দেখা যায়, চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে সড়ক অবরোধকারীদের মধ্যে এক ব্যক্তিকে জাপটে ধরে তার ওপর গুলি চালায় একজন পুলিশ সদস্য। এ সময় আরেক মুখোশধারী বিক্ষোভকারী এগিয়ে এলে তার পেটে গুলি করা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। দুই বিক্ষোভকারীকে গুলিবর্ষণের পর আরও দুই রাউন্ড তাজা গুলি ছোড়েন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া দুই বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। এরমধ্যে প্রথম জন ব্যাপক রক্তাক্ত হলেও দ্বিতীয় জনের তখনও জ্ঞান ছিল। পরে ঘটনাস্থলে জমায়েত হয় আরও বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী।

গত ৮ নভেম্বর হংকংয়ে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের গুলিতে আহত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে অঞ্চলটির গণতন্ত্রপন্থীদের চীনবিরোধী বিক্ষোভ আরও তীব্র রূপ নেয়। ৪ নভেম্বর বিক্ষোভে পুলিশের অভিযানকালে গুরুতর আহত হন অ্যালেক্স চো নামের ওই শিক্ষার্থী। কয়েক দিনের মাথায় গত ৮ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে হংকং সিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের এ আহ্বানকে সমর্থন করেছে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

চৌ’র মৃত্যুতে চলমান আন্দোলনে তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সংকট আরও গভীর হচ্ছে। গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের নেতা জসুয়া ওয়াং টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘হংকংয়ের একজন মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়ে আমরা শোকাহত। আমরা আর পেছনে ফিরবো না।’ সূত্র: আল জাজিরা।