ধর্ষণে অভিযুক্তদের গুলি করে হত্যায় হায়দ্রাবাদে উল্লাস কেন?

মিষ্টি বিতরণ, আনন্দ মিছিল আর বাজি পুড়িয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েছে ভারতের হায়দ্রাবাদের বেশিরভাগ মানুষ। গত সপ্তাহে এক নারী চিকিৎসককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যায় অভিযুক্তরা পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে উল্লাসে মাতে তারা। শুক্রবার ওই খবর ছড়িয়ে পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে পুলিশি পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দেয় অন্তত দুই হাজার মানুষ। এছাড়া ওই নারীর বাড়ির পাশেও সমবেত হয়ে মিষ্টি বিতরণ করেন অনেকে। অনলাইনেও চলছে পুলিশের প্রশংসা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ভারতের বিচার ব্যবস্থায় রায় পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ায় হায়দ্রাবাদের ওই ঘটনায় উল্লাস প্রকাশ করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।`ক্রসফায়ারের` খবর ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে হাজির হয় হাজার হাজার মানুষ

গত ২৭ নভেম্বর তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দ্রাবাদে পাওয়া যায় ২৭ বছর বয়সী এক নারী পশু চিকিৎসকের পুড়ে যাওয়া মরদেহ। তদন্ত শেষে পুলিশ জানায়, চার ব্যক্তি ধর্ষণ করেছে ওই চিকিৎসককে। এরপর খুন করে পেট্রোল-ডিজেল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মরদেহ। ২৯ নভেম্বর অভিযুক্তদের সবাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) পুলিশ জানায়  ‘তদন্তের স্বার্থে’ ওই নারীর মরদেহ যেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সেখানে সকালে অভিযুক্তদের নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের দাবি,ঘটনাস্থল সাদনগর মহাসড়কে তাদের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয় আসামিরা।

এই খবর ছড়িয়ে পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেখানে জড়ো হয় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ। ‘পুলিশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি চলে মিষ্টি বিতরণ। যে স্থান থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার ও ‘ক্রসফায়ার’ সংগঠিত হয়েছে সেই স্থানে ফুল ছড়িয়ে দেওয়া হয়।নারী চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধারের স্থানে ফুল ছড়িয়ে দেওয়া হয়

এছাড়া ওই নারীর বাড়ির পাশেও জড়ো হয় বহু মানুষ। বাজি পোড়ানোর পাশাপাশি সেখানেও মিষ্টি বিতরণ চলে। অনলাইনেও পুলিশি পদক্ষেপের প্রশংসা চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে এই ঘটনা নিয়ে প্রায় তিন লাখ টুইট হয়েছে। এর বেশিরভাগই পুলিশি পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়েছে।

ভারতীয়দের এই বিপুল উল্লাসের নেপথ্য কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের বিচার ব্যবস্থায় রায় পেতে প্রায়ই দীর্ঘ সময় লেগে যায়। বছরের পর বছর ধরে আদালতে ঘুরতে হয়। ভারতে দেড় লাখ ধর্ষণ মামলাসহ লাখ লাখ মামলার বিচাল চলছে।  ফলে বিচার ব্যবস্থার ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছে মানুষ।

গত কয়েক বছরের মধ্যে এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ ২০১২ সালে দিল্লিতে এক চলন্ত বাসে ২৩ বছর বয়সী নারী ‘নির্ভয়া'কে (প্রতীকী নাম) সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা। ওই ঘটনার পর লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ জানায়। দাবি ওঠে ধর্ষণবিরোধী আইন কঠোর করার। বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা ওই ঘটনার বিচারও চলছে ধীর গতিতে। ঘটনার সাত বছর পর নিহত নির্ভয়ার মা আশা দেবী জানিয়েছেন, ওই নৃশংসতায় অভিযুক্ত পুরুষেরা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে দণ্ড বিলম্বিত করতে আইনের সব ফাঁকফোকরই ব্যবহার করছে তারা।হায়দ্রাবাদের অভিযুক্তরা নিহত হলে চলে মিষ্টি বিতরণ

হায়দ্রাবাদের ঘটনায় অভিযুক্তদের ক্রসফায়ারে মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের প্রশংসা করেন আশা দেবী। বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় হতাশ মানুষের প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি।

গত সপ্তাহে হায়দ্রাবাদের ধর্ষণ ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা সামনে আসার পর আবারও আলোচনায় আসে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে হতাশা। অনেকেই বলেন, নিপীড়িতের বাবা-মায়েরা যখন ন্যায়বিচার পেতে থানা-আদালতে চক্কর দিতে থাকেন তখন অভিযুক্তরা জনগণের করের টাকায় ভোজ খাবে। আর এই হতাশা থেকে বহু ভারতীয় তাৎক্ষণিক বিচারের দাবি তুলেছে। সমর্থন দিয়েছে পুলিশি পদক্ষেপের।

তবে শুক্রবার হায়দ্রাবাদে পুলিশের ক্রসফায়ারের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা প্রকাশ সিং বলেছেন, ওই হত্যাকাণ্ড পুরোপুরি এড়ানো যেতো। আবার কোনও কোনও আইন বিশেষজ্ঞ এই ঘটনাকে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেছেন। কেউ কেউ সঠিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন।  জনগণের ক্ষোভ নিরসন করতে গিয়ে পুলিশ নিরীহ ট্রাকচালকদের গ্রেফতার করেছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, চারজনই পুলিশের বন্দুক কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে বিশ্বাস করেন না তিনি। তবে শুক্রবার এই ধরণের মানুষের সংখ্যা খুবই কম হয়ে যায়।