ভারতের নাগরিকত্ব বিল আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী: এইচআরডব্লিউ

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে (সিএবি) আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে এর তীব্র সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। বিতর্কিত ওই বিলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে নিপীড়নের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটা মুসলিমদের সঙ্গে বৈষম্য সৃষ্টি করছে দাবি করে বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিবৃতি দিয়েছে ওই মানবাধিকার সংস্থা।

201912asia_india_cab

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে ৩১১-৮০ ভোটে লোকসভার অনুমোদন পায় ‘দ্য সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্টমেন্ট) বিল, ২০১৯’ শীর্ষক বিতর্কিত বিল।অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে লোকসভায় এটি উত্থাপন করে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি-র এক প্রতিবেদনে বিলটিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বুধবার এটি রাজ্যসভায় উত্থাপন করা হয়। বিজেপি সরকার বলছে, এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত মানুষের আশ্রয়স্থল হবে ভারত। তবে সমালোচকদের মতে, বিজেপি’র মুসলমান জনগোষ্ঠীকে কোণঠাসা করার নীতির অংশই এই বিলটি।

এইচআরডব্লিউ’র দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রধান মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, ‘ভারত সরকারের দাবি, নাগরিকত্ব আইনের লক্ষ্য হচ্ছে পাকিস্তানের আহমাদিয়া এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বাদ দিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা। তবে এ বিলে আশ্রয় দেওয়ার কথা বলা হলেও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ধর্মীয় ভিত্তিতে বৈষম্য করা হয়েছে।’

এইচআরডব্লিউ বলছে, বিজেপির রাজনীতিবিদরাও মুসলিম অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। নির্বাচনে সমর্থন পেতে তাদেরকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে উল্লেখ করেছেন। সরকার মুসলিমদের সঙ্গে বৈষম্য করছে; তাদেরকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ আর বাকিদের ‘শরণার্থী’ আখ্যা দিচ্ছে সরকার। বিল উত্থাপনের পর বিজেপি প্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘শরণার্থী ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এই বিল শরণার্থীদের জন্য।’

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত বিলটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (আইসিসিপিআর) ও অন্যান্য মানবাধিকার চুক্তির লঙ্ঘন। এসব চুক্তিতে স্বাক্ষরকৃত দেশগুলোর ধর্ম, বর্ণ, জাতিগত-ধর্মের কারণে নাগরিকত্ব বাতিল না করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ভারত এই আইন পাস করলে এর চুক্তির লঙ্ঘন হবে।

মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, ‘লাখ লাখ মুসলিমের নাগরিকত্ব অধিকারের মতো মৌলিক অধিকারকে ছিনিয়ে নেওয়ার আইনি ভিত্তি তৈরি করেছে সরকার। এখন ভারত সরকারের উচিত একটি আইন পাস করে শরণার্থীদের সুরক্ষা দিতে দেশটির প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, যা ধর্ম নির্বিশেষে তাদের সুরক্ষা দেয়।’