লিবিয়ায় হাফতার বাহিনীর ১০ সদস্য নিহত, সাঁজোয়া যান ধ্বংস

লিবিয়ায় নতুন করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা খলিফা হাফতারের অনুগত বাহিনী। সোমবার রাজধানী ত্রিপোলীর দক্ষিণাঞ্চলে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় তারা। দেশটির জাতীয় ঐকমত্যের সরকার জানিয়েছে, ওই ঘটনায় হাফতার বাহিনীর ১০ সদস্য নিহত হয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাসীদের ১২টি সাঁজোয়া যান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।12
এক বিবৃতিতে সোমবারের সংঘর্ষ নিয়ে কথা বলেছেন লিবিয়ার জাতিসংঘ স্বীকৃত গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ড (জিএনএ) সরকারের মুখপাত্র মোহাম্মদ কানুনু। তিনি বলেন, হাফতার বাহিনীর সাঁজোয়া যান নিয়ে চালানো একটি হামলা নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে।

এমন সময়ে এ সংঘর্ষের খবর এলো যার কিছুদিন আগেই তুরস্কের কাছে সামরিক সহায়তা চেয়েছে লিবিয়ার জিএনএ সরকার। ওই আহ্বানের প্রেক্ষিতেই ইতোমধ্যেই দেশটিতে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। সম্প্রতি আঙ্কারায় নিজ দল ক্ষমতাসীন একে পার্টি-র এক অনুষ্ঠানে এ নিয়ে কথা বলেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, লিবিয়ার পক্ষ থেকে দেশটিতে সেনা মোতায়েনের জন্য তুরস্কের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। আঙ্কারা সে অনুরোধ গ্রহণ করবে। আগামী জানুয়ারিতে তুরস্কের পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হবে। এ সময় সেখানে লিবিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশটিতে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে বিল তোলা হবে। অভ্যুত্থানকামী জেনারেলের (বিদ্রোহী নেতা খলিফা হাফতার) বিরুদ্ধে আমরা লিবিয়া সরকারকে সব ধরনের সমর্থন দেবো।

জীবনযাপনের মানের দিকে থেকে তেলসমৃদ্ধ লিবিয়া একসময় আফ্রিকার শীর্ষে ছিল। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ছিল পুরোপুরি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তবে যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা ওই ঐশ্বর্য নিশ্চিত করেছিল, সেটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ২০১১ সালে যখন পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। তারপর থেকে লিবিয়ায় চলছে সীমাহীন সংঘাত। গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি মনোনীত সরকার রয়েছে। ওই কর্তৃপক্ষকে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার বা জিএনএ নামে অভিহিত করা হয়। তবে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়ে গেছে। পশ্চিমাঞ্চলে জিএনএ-র কর্তৃত্ব থাকলেও পূর্ব ও দক্ষিণের বেশিরভাগ অঞ্চল সাবেক সেনা কর্মকর্তা জেনারেল হাফতারের অনুগত বাহিনী এলএনএ-এর দখলে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে এ বাহিনী লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

প্রায় পাঁচ বছর ধরে লিবিয়ায় দুটি সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদের মধ্যে একটি সরকারকে সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ। আরেকটি ফিল্ড মার্শাল হাফতারের নেতৃত্বাধীন। ত্রিপোলির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে জাতিসংঘ। তুরস্ক, ইতালি ও যুক্তরাজ্যও এ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। আর হাফতার বাহিনীর সমর্থনে রয়েছে রাশিয়া, ফ্রান্স, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে (জিএনএ) সমর্থন করে এবং শান্তি আলোচনার আহ্বান জানায়। কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খলিফা হাফতারকে ফোন দিয়ে লিবিয়ার ব্যাপারে ‘যৌথ স্বপ্নের’ কথা বলেন। সূত্র: ইয়েনি সাফাক, আল জাজিরা।