দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে

ভারতের রাজধানী দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল আটটায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সম্প্রতি পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) প্রতিবাদে দেশজুড়ে চলা বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মধ্যে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বিধানসভায় প্রতিনিধি বেছে দিতে ভোট দিতে চলেছেন রাজধানীর প্রায় দেড় কোটি ভোটার। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।

 1

দিল্লির মোট ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ৪৮ লাখ। এর মধ্যে ৮১ লাখ পুরুষ ও ৬৬ লাখ নারী। পাশাপাশি এই প্রথম ভোট দেবেন ২ কোটি ৩২ লাখ ভোটার। বিধানসভার মোট ৭০টি আসনে এবার ৬৭২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাজ্যের মধ্যে নয়াদিল্লি আসনে সর্বোচ্চ ২৮ জন প্রার্থী মাঠে আছেন। অন্যদিকে প্যাটেল নগর আসনে প্রার্থীর সংখ্যা সর্বনিম্ন মাত্র ৪ জন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত, দিল্লিতে কংগ্রেস ভোটের রাজনীতিতে থাকলেও এবারের মূল লড়াই হবে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের বিজেপির।

জনমত জরিপে এগিয়ে আছে আম-আদমি পার্টি। প্রায় সব সংস্থার সমীক্ষাতেই তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার আভাস মিলেছে। দলটি ম্যাজিক ফিগার ৩৬-এর বেশি আসন পাবে বলেই অনুমান করা হচ্ছে। যদিও এই সবকটি সমীক্ষাই শেষ হয়েছে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে। ফলে তারপর থেকে অনেক ঘটনা ঘটেছে। শাহিনবাগ, জামিয়ার সামনে গুলি চালানো থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সরাসরি ‘আতঙ্কবাদী’ বলে দেওয়ার মতো উগ্র মেরুকরণ ঘটেছে দিল্লিতে।
ইলেক্ট্রনিক ভোটযন্ত্রে (ইভিএম) জনমত যাচাই হয়ে গেলেও দিল্লির মসনদ কার দখলে তা জানা যাবে আগামী মঙ্গলবার অর্থাৎ ১১ ফেব্রুয়ারি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দিল্লি দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি। তাদের অভিধানে বসে থাকা নেই। তাই লোকসভা ভোটের দুই মাসের মধ্যেই দিল্লির বিধানসভা ভোটের নির্বাচনি কার্যক্রম গোছানোর কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন অমিত শাহ, জগৎপ্রকাশ নাড্ডারা। অমিত শাহ নিজে বটেই, প্রকাশ জাভড়েকর, মনোজ তিওয়ারিদের মতো সংগঠনবোদ্ধা ১১ জন নেতাকে বিধানসভাভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

পর্যবেক্ষকদের মতে, তীব্র মেরুকরণের আবহেই এবার ভোট হচ্ছে দিল্লিতে। এই মেরুকরণের রাজনীতি শুরু করেছে বিজেপি-ই। পাল্টা গত পাঁচ বছরে তার সরকার কী কী কাজ করেছে সেটাকেই প্রচারের হাতিয়ার করেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। একদিকে শাহিনবাগ, অন্যদিকে জামিয়া মিলিয়া জমায়েত—এর মাঝেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন দিল্লির মানুষ।

লোকসভা নির্বাচনে ৩০০-এর বেশি আসন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় গেলেও রাজ্যগুলোর ভোটে বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি বিজেপি। হরিয়ানায় কোনমতে সরকার গঠন করেছে গেরুয়াশিবির। মহারাষ্ট্রের মসনদ হাতছাড়া হয়েছে। দীর্ঘদিনের জোট শরিক শিবসেনা বেরিয়ে গিয়ে কংগ্রেস-এনসিপির সঙ্গে সরকার গড়েছে। হাতছাড়া হয়েছে ঝাড়খণ্ডের মসনদও। ফলে ক্রমশ রাজ্যগুলো থেকে ফিকে হতে শুরু করেছে গেরুয়া রঙ। তাই যেখানে বসে মোদি-শাহ দেশ চালান সেখানেও যদি বিজেপিকে হারতে হয় তাহলে তা ধাক্কা বইকি। তাই কোমর বেঁধে নেমে প্রচার করেছেন সব নেতারা। এখন দেখার ১১ তারিখ ইভিএম থেকে কী ফল প্রকাশ পায়।