মোদির নিরাপত্তায় দৈনিক ব্যয় প্রায় ২ কোটি

আইন সংশোধন করে গান্ধী পরিবারের তিন সদস্য সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল ও প্রিয়াঙ্কার স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) নিরাপত্তা তুলে দিয়েছিল ভারতের মোদি সরকার। ২০১৯ সালে দেশটির পার্লামেন্টে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করা হয়। এর ফলে এখন দেশটিতে একমাত্র এসপিজি নিরাপত্তা পান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে এর খরচ কত? বুধবার সরকারের পক্ষ থেকে পার্লামেন্টে এর হিসাব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মোদির নিরাপত্তায় দৈনিক ব্যয় হয় এক কোটি ৬২ লাখ রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় এক কোটি ৯২ লাখ ৮৮ হাজার ১৪২ টাকা।12
এ হিসাবে মোদির নিরাপত্তার পেছনে ভারতীয় মুদ্রায় ঘণ্টায় ৬ লাখ ৭৫ হাজার রুপি এবং মিনিটে ১১ হাজার রুপিরও বেশি খরচ হয়।

চার জন থেকে কমে এসপিজি নিরাপত্তার আওতায় এখন রয়েছেন এক জন— প্রধানমমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অথচ ১ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের পেশ করা ২০২০-২১ সালের বাজেটে সেই এসপিজি নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে যেখানে চার জনের এসপিজি নিরাপত্তার জন্য বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল ৫৪০ দশমিক ১৬ কোটি টাকা, এবার এক জনের জন্যই সেই বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৫৯২ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা।

এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। বুধবার লোকসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে ডিএমকে-র পার্লামেন্টারিয়ান দয়ানিধি মারান জানতে চান, আইন সংশোধনের পর বর্তমানে কতজন এসপিজি নিরাপত্তা পান এবং সিআরপিএফ কতজনকে নিরাপত্তা দেয়। সেই নিরাপত্তাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কে বা কারা সেই প্রশ্নও তুলে ধরেন তিনি। 

লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র  প্রতিমন্ত্রী জি কিষেণ রেড্ডি পার্লামেন্টকে জানান, এসপিজি নিরাপত্তা পান শুধু একজন (তিনি নরেন্দ্র মোদির নাম নেননি)। আর সিআরপিএফ-এর নিরাপত্তা পাওয়া ভিআইপি-র সংখ্যা ৫৬। তবে নিরাপত্তার কারণে তাদের কারও নাম জানানো সম্ভব নয়।

বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, এসপিজি নিরাপত্তার আওতায় ব্যক্তির সংখ্যা কমে চার থেকে এক হয়েছে। সেই হিসেবে বাজেট বরাদ্দ চার ভাগের এক ভাগ না হলেও অনেক কম হওয়া উচিত। উল্টে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হলো কেন? তারা অংক কষে বুঝিয়েছেন, ২০১৯ সালে বাজেটে বরাদ্দ ৫৪০ দশমিক ১২ কোটির হিসাব ধরলে মাথাপিছু খরচ দাঁড়ায় ১৩৫ কোটি রুপি। সেটা মাথায় রাখলে বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে ৩৪০ শতাংশ!

১৯৮৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকাণ্ডের পর বিশেষ কমান্ডো বাহিনী নিয়ে গঠিত হয় এসপিজি। অভিজাত এই বাহিনীর ওপর দায়িত্ব বর্তায় প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার। ফলে রাজীব গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী এবং তাদের দুই সন্তান রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াংকা গান্ধী স্বাভাবিকভাবেই এসপিজি নিরাপত্তার আওতায় আসেন।

১৯৮৯ সালে ভিপি সিংহ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গান্ধী পরিবারের সদস্যদের এসপিজি নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়। এরপর ১৯৯১ সালে খুন হন রাজীব গান্ধী। সে বছরই কংগ্রেস ফের ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রী হন পি ভি নরসিংহ রাও। সোনিয়ার সুপারিশে ফের গান্ধী পরিবারের সদস্যদের জন্য চালু হয় এসপিজি নিরাপত্তা। তখন থেকে সেই রীতিই চলে আসছিল।

২০১৯ সালে ওই আইন সংশোধন করে মোদি সরকার। তুলে নেওয়া হয় গান্ধী পরিবারের এসপিজি নিরাপত্তা। নতুন আইনে শুধু ভারতের প্রধানমন্ত্রীই এসপিজি নিরাপত্তা পান। গান্ধী পরিবারের নিরাপত্তায় বরাদ্দ হয় সিআরপিএফ। সূত্র: আনন্দবাজার।