পাকিস্তানেও একুশের উত্তাপ

যে রাষ্ট্র একদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষাভাষী মানুষের অধিকারকে রক্তাক্ত করেছিল, সেই পাকিস্তানেও লেগেছে একুশের উত্তাপ। বাংলাদেশের ভাষা শহীদ দিবসকে বিশ্বের আর সব দেশের মতো করেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করছে তারাও। সেখানেও আওয়াজ উঠেছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে সব মানুষের মাতৃভাষাকে সুরক্ষিত করার। পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর থেকে জানা গেছে,  মাতৃভাষার গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে সেখানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সেমিনার, আলোচনা সভা, উৎসব ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা হয়েছে।

noname

স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতার পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আজকের বাংলাদেশের মানুষ প্রথম মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল ভাষার প্রশ্নে। ‘বাংলা’কে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ২১ ফেব্রুয়ারি রক্তাক্ত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। ইতিহাসের এই অনন্য নজির ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। ওই বছরের নভেম্বরে ইউনেস্কোর সাধারণ সভায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রতিবছর ভাষাবিদ্যা, ভাষার বহুত্ব এবং সাংস্কৃতিক বহুমুখিতাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করা হচ্ছে।

ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও বাংলাদেশের ভাষাশহীদ দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এদিকে ফেডারেল রাজধানী ইসলামাবাদে পাকিস্তান ন্যাশনাল কাউন্সিল অব আর্টস (পিএনসিএ) ২১ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করেছে। তিন দিনের ওই উৎসবে ভাষা ও সাহিত্যের ভিন্ন ভিন্ন দিক নিয়ে বক্তারা কথা বলবেন। অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা ও প্রদর্শনী।  

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ইসলামাবাদের লোক ভিরসা জাদুঘর এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। ‘পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষার সুরক্ষা নিশ্চিতে সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জসমূহ’ শিরোনামের ওই আলোচনায় অংশ নেবেন প্যানেল আলোচকরা।

এছাড়া পাকিস্তানের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাতৃভাষার গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।  

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ১৬ মে তারিখে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় এ/আরইএস/৬১/২৬৬ নম্বর নথি অনুসারে, সকল সদস্য দেশের উদ্দেশে, ‘বিশ্বের সকল ভাষার সংরক্ষণ এবং সুরক্ষার বিষয়টি’ প্রচার করতে বলা হয়। একই নথিতে ভাষাসমূহের মধ্যে বহুভাষা এবং বহু সংস্কৃতির মধ্যে বহুমুখিতার ঐক্যবদ্ধতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৮ সালকে ‘ভাষাসমূহের আন্তর্জাতিক বছর’ বলে ঘোষণা করা হয়।