‘ভুল বোঝাবুঝি থাকলেও তা দূর করে দেবে মোদির আসন্ন ঢাকা সফর’

শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি

মুজিব বর্ষের উদ্বোধনী উৎসবে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ১৭ মার্চ ঢাকায় থাকবেন বলে আপাতত স্থির হয়েছে। পরদিন ১৮ মার্চ ভারত ফিরবেন তিনি। দুদিনের এই সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথাও রয়েছে।

এর আগে, ২০১৫ সালের জুন মাসে শেষবার বাংলাদেশ সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সেই হিসেবে প্রায় দীর্ঘ পাঁচ বছর পর তিনি আবার বাংলাদেশ যাচ্ছেন। যে প্রতিবেশী দেশকে ভারত সবসময় তাদের ঘনিষ্ঠতম মিত্র বলে বর্ণনা করে থাকে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে স্মরণীয় করে রাখতে ভারত কার্যত চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছে না।

২০১৫ সালে মোদির বাংলাদেশ সফর সব দিক থেকেই ছিল ব্যতিক্রমী। সেবার দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তিই শুধু স্বাক্ষরিত হয়নি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোদির ভাষণও প্রশংসিত হয়েছিল।

কিন্তু তারপর গঙ্গা-পদ্মা-বুড়িগঙ্গা দিয়েও জল গড়িয়েছে অনেক। দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আপাত মসৃণভাবে এগোলেও ভারতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি তৈরি করা বা নতুন নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে কিছুটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদির সফর সেই যাবতীয় ভুলবোঝাবুঝি, যদি আদৌ সেরকম কিছু থেকে থাকে, ভেঙে দিতে পারবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। পাশাপাশি ভারত কখনোই এমন কিছু করবে না, যা থেকে বাংলাদেশের আশঙ্কার কারণ থাকবে- সেটাও তিনি অবশ্যই পরিষ্কার করে দেবেন।’

delhi 2

ঢাকায় দুই প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বৈঠকে যে কোনও দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়েই আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, ‘আপনারা জানেন, দুজন প্রধানমন্ত্রী যখন এরকম বৈঠকে মিলিত হন, তাদের আলোচনার কোনও পূর্বনির্ধারিত এজেন্ডা থাকে না। এবারেও থাকবে না। তারা চাইলে দুপক্ষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোনও বিষয়ই তুলতে পারেন, সেটা নিয়ে কথা বলতে পারেন।’

তবে এই সফরের ‘জমি’ প্রস্তুত করতেই প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের ১০-১২ দিন আগেই ঢাকায় উড়ে যাচ্ছেন ভারতের নবনিযুক্ত পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। দিল্লিতে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান কয়েকদিন আগে  শ্রিংলার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন, তখনই এই সফরের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বছরকয়েক আগেই ঢাকাতে ভারতের হাই কমিশনার ছিলেন, বাংলাদেশকে তিনি ভালো চেনেন। শুধু পররাষ্ট্র সচিবই নন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও এই সফরকে সর্বাত্মকভাবে সফল করে তোলার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে জয়শঙ্করও দিল্লিতে দেখা করেছেন বাংলাদেশের নতুন হাই কমিশনার মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে। সেখানে আলোচনার মূল এজেন্ডাই ছিল মোদির ঢাকা সফর।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে সেদিন বলেন, ‘শেখ মুজিবকে চিকাল ভারতীয়রা পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে এসেছে। তিনি ছিলেন সত্যিকারের একজন বিশ্বনেতা। বাংলাদেশকেও ভারত মর্যাদার চোখে দেখে এসেছে, তাদের জন্য শুভকামনারও কখনও অভাব ছিল না।’