রোহিঙ্গা নিধন: মিয়ানমারে জার্মানির উন্নয়ন সহযোগিতা স্থগিত

বাংলাদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়েছিলেন জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী ড. গার্ড মুলার৷ জার্মানির অর্থনীতি ও উন্নয়ন সহযোগিতা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের খবর অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নেয়া পর্যন্ত মিয়ানমারের সঙ্গে জার্মানির উন্নয়ন সহযোগিতা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷

noname

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইনে হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ শুরু করলে জীবন বাঁচাতে নতুন করে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

২৫ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) দু' দিনের বাংলাদেশ সফরের প্রথম দিনে ড. গার্ড মুলার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ বুধবার সকালে রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারে যান৷

জার্মানির অর্থনীতি ও উন্নয়ন সহযোগিতা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের খবরে বলা হয়েছে, কুতুপালং শিবির পরিদর্শন শেষে রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন মুলার। তিনি বলেছেন, ‘‘আজ আমি অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার নারীদের সঙ্গে কথা বলেছি৷ কুতুপালংয়ের বিশ্বের অন্যতম বড় এই শরণার্থী শিবিরে খড়ের তৈরি ঘরে আট লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন৷ তাদের অবস্থা দেখে আমি বিমর্ষ৷ জাতিগত নির্মূলের এমন প্রয়াস এবং মানবতাবিরোধী এমন অপরাধ মেনে নেয়া যায় না৷''

জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন মন্ত্রী  মনে করেন মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ না বাড়ালে দেশটি কখনোই রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে না৷ মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে তাই দেশটির সঙ্গে জার্মানির উন্নয়ন সহযোগিতা স্থগিতের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি, ‘‘১০ লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের জন্মভূমিতে ফিরিয়ে নেয়া এবং এখনো সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে না তারা৷ মিয়ানমার যতক্ষণ পর্যন্ত এসব না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত দেশটির সঙ্গে সব উন্নয়ন সহযোগিতা আমরা স্থগিত রাখবো৷''

রোহিঙ্গা নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। মামলায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও সংঘাত আরও তীব্রতর না হওয়ার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল দেশটি।

এ বছর জানুয়ারিতে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় চারটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। আদালতের রায়ে রোহিঙ্গাদের ওপর শারীরিক-মানসিক নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, গণহত্যা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় মিয়ানমারকে।