কে এই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া?

২১ জন আইনপ্রণেতাকে সঙ্গে নিয়ে পদত্যাগ করে মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস সরকারকে পতনের মুখে টেনে নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে আলোচিত হয়ে উঠেছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। স্বাধীনতার সময়ে ভারতের সর্বোচ্চ মর্যাদার ‘রাজঘরানা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া অল্প কয়েকটি পরিবারের অন্যতম সিন্ধিয়া পরিবার। এই পরিবারের উত্তরাধিকার হিসেবে কংগ্রেস থেকে চারবার পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ৪৯ বছর বয়সী জ্যোতিরাদিত্য। এক সময় গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ এই নেতার সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে।২০১৮ সালের নির্বাচনি প্রচারে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া

মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পর কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তার কিছুক্ষণের মধ্যে রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার ২১ জন আইনপ্রণেতা। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বিজেপিতে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, তাকে রাজ্যসভার সদস্যপদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করা হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, ২০১৮ সালের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ ঘিরে কংগ্রেসে কোণঠাসা হয়ে পড়েন জ্যোতিরাদিত্য। রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তাকে বাদ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী করা হয় কমলনাথকে। রাজ্য সভাপতিও করা হয়নি তাকে। এমনকি রাজ্যসভার সদস্যও করা হয়নি। এসব নিয়ে দলের সঙ্গে দূরত্ব হোতে থাকে তার। ক্ষুব্ধ হয়ে গত বছর নভেম্বরের শেষ দিকে টুইটার একাউন্ট থেকে নিজের কংগ্রেসি পরিচয় মুছে ফেলেন জ্যোতিরাদিত্য। ইউপিএ আমলের সাবেক মন্ত্রীর বদলে, ‘জনসেবক’ এবং ‘ক্রিকেটপ্রেমী’ হিসাবে নিজের পরিচয় দেন তিনি। তখন থেকেই তার বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়া নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। তবে প্রকাশ্যে তা অস্বীকার করতে থাকেন তিনি।

মধ্যপ্রদেশের মারাঠা রাজবংশের সর্বশেষ ‘মহারানি’ ছিলেন রাজমাতা বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া। ১৯৫৭ সালে গুণা লোকসভা আসন থেকে কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচিত হন বিজয়ারাজে। ১৯৬২ সালেও কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচন করলেও দলটির শীর্ষ ক্ষমতায় ইন্দিরা গান্ধীর উত্থানের জেরে দূরত্ব বাড়তে থাকে তার। ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যে যোগ দেন জনসঙ্ঘ পার্টিতে। বিজেপি গঠনেও ভূমিকা রাখেন তিনি।মারাঠা রাজবংশের সর্বশেষ মহারানি রাজমাতা বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া

নিজের ছেলে মাধবরাও সিন্ধিয়াকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন তিনি। তবে ১৯৭৭ নাগাদ মাধবরাওয়ের সঙ্গে জনসঙ্ঘের সম্পর্কে ভাঙন ধরে যায়। কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০২ সালে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত কংগ্রেসেই ছিলেন মাধবরাও।

পিতার আকস্মিক মৃত্যুর পর রাজনীতিতে আসেন বিদেশে পড়ালেখা করা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। উপনির্বাচনে পিতার আসনেই ৩০ বছর বয়সী জ্যোতিরাদিত্যকে প্রার্থী করে কংগ্রেস। বিপুল ব্যবধানে জিতে জ্যোতিরাদিত্য লোকসভায় পৌঁছান। ২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে আসন ধরে রাখার পুরস্কার হিসেবে তিন বছর পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও করা হয় তাকে।মাধবরাও সিন্ধিয়া

২০০১ সালে রাজমাতা বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া মারা যান। কিন্তু তার দুই মেয়ে বসুন্ধরা রাজে এবং যশোধরা রাজে ততদিনে বিজেপিতে জায়গা করে নিয়েছেন। বসুন্ধরা রাজস্থানের রাজনীতিতে আর যশোধরা রয়েছেন মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায়।

ভাইপো জ্যোতিরাদিত্য কংগ্রেস থেকে পদত্যাগের পর এক প্রতিক্রিয়ায় যশোধরা রাজে বলেছেন, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে। তিনি বলেন, ‘যেভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাকে স্বাগত জানিয়েছেন তাতে রাজমাতা বিজয়ারাজে সিন্ধিয়ার প্রতিই তাদের সম্মানই প্রকাশ পায়। শেষ পর্যন্ত সবারই আত্মমর্যাদার প্রয়োজন’। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন মাধবরাও সিন্ধিয়া (জ্যোতিরাদিত্যের বাবা) যখন গোয়ালিয়র থেকে নির্বাচনে দাঁড়ান তখন তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সেখানে প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। জ্যোতিরাদিত্যকেও একই সম্মান দেখাবো। এই পদক্ষেপ জাতীয় স্বার্থে’।