করোনা ভাইরাস

ইউরোপের তিন দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড

ইউরোপের তিন দেশে রবিবার করোনা ভাইরাসে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড তৈরি হয়েছে। ইতালিতে এদিন ৩৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্পেনে একদিনে ৯৭ আর ফ্রান্সে ২৯ জন মারা গেছে। যুক্তরাজ্যেও একদিনে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। সেখানে এদিন ১৪ জন মারা যাওয়ায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ জনে।12

প্রাদুর্ভাবের কারণে ইউরোপের সরকারগুলো নাগরিকদের চলাচল সীমিত করেছে। সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

সোমবার সকাল থেকে ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক ও লুক্সেমবার্গের সঙ্গে সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে জার্মানি। স্পেনের সঙ্গে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণা দিয়েছে পর্তুগাল।

নাগরিকদের চলাচল সীমিত করেছে চেক রিপাবলিক সরকার। দেশটি ঘোষণা দিয়েছে যে, জনগণ কাজে যাওয়া ও ফেরা, খাবার বা ওষুধ কেনা এবং জরুরি প্রয়োজনে ক্ষেত্রে আত্মীয়দের বাড়িতে যেতে পারবে। এছাড়া অন্য যেকোনও ধরনের চলাচলে স্থানীয় সময় রবিবার মধ্যরাত থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

সোমবার থেকে একসঙ্গে পাঁচ জনের বেশি মানুষের সমাগম নিষিদ্ধ করেছে অস্ট্রিয়া। ইউরোপের অনেক দেশেই স্কুল বন্ধ রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করেছে যে, চীনে শুরু হওয়া মহামারির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ইউরোপ।

সুইজারল্যান্ড বলেছে যে, দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮০০ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। যা নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২২০০ জনে। দেশটিতে ১৪ জন মারা গেছে।

এই প্রাদুর্ভাবে চীনের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইতালি। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ হাজার ৭৪৭ জন। শুধু মিলানের ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লোম্বার্ডি এলাকাতেই মারা গেছে এক হাজার ২১৮ জন।

গত সোমবার পুরো দেশ অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দেয় ইতালি সরকার। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে নাগরিকদের চলাচলেও। খাবার আর ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য সব কিছু বন্ধ থাকবে। এর আগে স্কুল, ব্যায়ামাগার, জাদুঘর, নাইট ক্লাব এবং অন্যান্য স্থাপনা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

শনিবার সাত ৭৫৩ জন আক্রান্ত থাকা স্পেন এবং পাঁচ হাজার ৪০০ জন আক্রান্ত থাকা ফ্রান্স, এই দেশ দুটি নিজেরাই আলাদাভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ নিয়েছে। কাজ কিংবা খাবার ও ওষুধ কেনা ছাড়া সব ধরণের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্পেন। ফ্রান্সে ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল ও বেশিরভাগ দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে।

ব্যাপকহারে সমন্বিত পদক্ষেপ ও সম্পদ দিয়ে মহামারি রুখে দিতে সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন। তিনি বলেছেন, কোনও একক দেশে আলাদাভাবে উৎপাদনের পরিবর্তে জোটবদ্ধভাবে চিকিৎসা সরঞ্জাম যেমন ভেন্টিলেটর, পরীক্ষার কিট এবং মাস্কের উৎপাদন বাড়াতে হবে। জোটভুক্ত দেশ ছাড়া অন্য দেশে এসব পণ্যের রফতানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

সংকট মোকাবিলায় বিশ্বের বাকিরা কী করছে?

বুধবার থেকে ব্যাপক ভাবে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত দেশের নাগরিকদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটিতে ৬১ জন আক্রান্ত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, তার দেশ এখন স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া মোকাবেলায় কাজ করছে। সেই সঙ্গে দেশজুড়ে ‘জাতীয় দুর্যোগ পরিস্থিতি’ ঘোষণা করেছেন তিনি।

মহামারির প্রভাব থেকে মার্কিন অর্থনীতিকে রক্ষায় ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার শূন্যে নামিয়ে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিমানবন্দরে ইউরোপ থেকে ফিরে আসা মার্কিন নাগরিকদের স্ক্রিনিং নিয়ে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা।

২৬টি ইউরোপীয় দেশ থেকে আমেরিকান ছাড়া অন্য নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। মঙ্গলবার নাগাদ এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে যুক্তরাজ্য এবং আয়ারল্যান্ড। সূত্র: বিবিসি।