ট্রেনে করোনা আক্রান্ত যাত্রী থাকার গুজব, মুহূর্তেই খালি প্ল্যাটফর্ম

করোনা ভাইরাস আতঙ্ক যেন এখন বোমা আতঙ্কের চেয়েও ভয়ঙ্কর! গণপরিবহনে অনেকেই এ আতঙ্ক বয়ে বেড়ান। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ভারতের। দেশটিতে সরকারি হিসাবেই এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১১৫। এর মধ্যে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। বাতিল হচ্ছে একের পর এক ফ্লাইট। আসামের মারিয়ানি স্টেশনে সম্প্রতি এক ট্রেনে করোনায় আক্রান্ত দুই যাত্রী রয়েছেন, এমন গুজবে মুহূর্তেই খালি হয়ে যায় পুরো প্ল্যাটফর্ম।12

সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮-এর খবরে বলা হয়েছে, ট্রেনটি আসছিল চেন্নাই থেকে। প্ল্যাটফর্মে ঢুকতেই কোথায় আরও ভিড় বাড়বে! উল্টো মুহূর্তের মধ্যেই সব ফাঁকা ! রেলের পক্ষ থেকেই দায়িত্ব নিয়েই খালি করিয়ে দেওয়া হল পুরো প্ল্যাটফর্ম। আসলে ওই চেন্নাই এক্সপ্রেসের চার যাত্রীর মধ্যে করোনা ভাইরাসে উপসর্গ মেলার খবর পেয়েই সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাই তড়িঘড়ি প্ল্যাটফর্ম খালি করে দেওয়া হয়। স্টেশন ফাঁকা করে গোটা ট্রেনের যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। দুই ব্যক্তির সর্দি-কাশি থাকলেও তা করোনার মতো ছিল না। রেলের ডাক্তাররা ছাড়পত্র দেওয়ার পরই ফের গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।

এর আগে কেরালার কোচি বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ আগে দুবাইগামী একটি প্লেন থেকে ২৭০ জন যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। উড্ডয়নের আগ মুহূর্তেই জানা যায়, ওই ফ্লাইটের একজন ব্রিটিশ যাত্রীর শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওমিটারস ডট ইনফো’র হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় ১৬ মার্চ দুপুর পর্যন্ত ভারতে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১১৫। এর মধ্যে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছে ১৩ জন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, দেশটিতে এ ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে মহারাষ্ট্রে। সেখানে সরকারি হিসাবেই আক্রান্তের সংখ্যা ৩১। এর পরের অবস্থানে রয়েছে কেরালা। রাজ্যটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২২। হরিয়ানায় আক্রান্ত ১৪ জনের সবাই বিদেশি। দিল্লিতে আক্রান্ত হয়েছেন সাত জন। তাদের মধ্যে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। অধিকাংশ স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বহু অফিসেই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করছেন কর্মীরা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সিনেমা হলগুলো।

সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১৪ মার্চ দিল্লিতে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করেছে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। ২০০ মানুষ ওই পার্টিতে অংশ নেয়। এতে অংশ নেওয়া ওমপ্রকাশ নামের এক ব্যক্তি  বলেন, ‘আমরা ২১ বছর ধরে গোমূত্র পান করছি। গোবর দিয়ে গোসলও করি। কোনওদিন ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করিনি।’ আয়োজকদের বিশ্বাস, গোমূত্রে কিছু ঔষধি গুণ আছে।

ব্যবসা বাণিজ্যেও করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ভারতে বিশেষ করে পোলট্রি ব্যবসায় ধস নেমেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুজবের জেরে লোকজন মুরগির মাংস ও ডিম খেতে চাইছে না। মহারাষ্ট্রের পুনে শহরে ১০ টাকা কেজিতে মুরগি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। অথচ কয়েক সপ্তাহ আগেও কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৯০ টাকায় মুরগি বিক্রি করেছেন তারা।