আইএসআইএস-এ স্বাগত!

ISIS Clubআইএসআইএস। হঠাৎ করে শুনে নামটিকে ইরাক ও সিরিয়ায় তৎপর থাকা সশস্ত্র সুন্নিপন্থি সংগঠন বলে ভুল করে বসতে পারেন অনেকে। তবে আদতে এটি একটি এলাকার নাম। আইএসআইএস নামে যে সশস্ত্র সুন্নিপন্থি সংগঠনটিকে মোকাবেলায় পশ্চিমা বিশ্ব একত্রিত হয়েছে সেই নামেই একটি এলাকা রয়েছে খোদ অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে। নিজেদের জিহাদি সংগঠন দাবি করে যারা শিরশ্ছেদ করছে কিংবা যাদের সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে বিলুপ্ত করার নামে পশ্চিমাবিশ্ব নির্বিচার বিমান হামলা চালাচ্ছে, সেই একই নামবিশিষ্ট এলাকাতেই আবার ফলছে আভোকাদো ফল আর শস্য। পাওয়া যাচ্ছে প্রাণের স্পন্দন।

আইএসআইএস নামের সশস্ত্র সংগঠনটিকে ওই এলাকার মানুষ ঘৃণার চোখে দেখলেও নিজেদের স্বপ্নের শহরটির নাম পাল্টাতে মোটেও রাজি নন তারা। তাদের দাবি, বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে ফলের বাগান সমৃদ্ধ এলাকাটি আর ‘সন্ত্রাসী সংগঠনটির’ একই নাম হওয়ার পেছনে কোন যোগসূত্র নেই। আর সেকারণে এলাকাটির নাম পরিবর্তন না করার অঙ্গীকার ধরে রাখতে চান তারা।

গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম সেভেন নেটওয়ার্কের সানরাইজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বুন্দাবার্গের আঞ্চলিক কাউন্সিলর এবং আইএসআইএস শায়ার কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র টনি রিকিয়ার্ডিও এলাকাটির নামের সঙ্গে আইএস সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানান।

গার্ডিয়ান অস্ট্রেলিয়াকে দেয়া সাক্ষাতকারে রিকিয়ার্ডি বলেন, ওই অনুষ্ঠানের পর এখন পর্যন্ত আর এলাকাটির নাম পরিবর্তনের দাবি ওঠেনি। তিনি বলেন ‘সত্যিকার অর্থে আমি যে অবস্থান নিয়েছি তাতে মানুষ আমাকে স্বাগতই জানিয়েছে। ১৮৭০ এর দশক থেকে আইএসআইএস যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে।’

যেভাবে আইএসআইএস এলাকার নামকরণ

বুন্দাবার্গের দক্ষিণে এবং হার্ভে বে’র পশ্চিমে অবস্থিত আইএসআইএস এলাকাটির আয়তন ১৭শ’ বর্গ কিলোমিটার। এখানে বসবাস করেন প্রায় ৭ হাজার মানুষ।

রিকিয়ার্ডি জানান, যুক্তরাজ্যের আইএসআইএস নদীর নামে আইএসআইএস’র নামকরণ করেছিল সেখানে বসতি স্থাপনকারীরা। আর এত বছর সে নামেই পরিচিত হয়ে আসছে এলাকাটি। রিকিয়ার্ডি আরও জানান, আইএসআইএস নামে বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছে। উত্তর আইএসআইএস এবং দক্ষিণ আইএসআইএস নামে অঞ্চলটির ভেতর শহর রয়েছে।

নামের বিড়ম্বনা

তবে এলাকাটির নাম নিয়ে বহির্বিশ্বে বিড়ম্বনা পোহাতে হবে বলে স্বীকার করেছেন ‍রিকিয়ার্ডি। তিনি বলেন, ‘আমি আমার ফুটবল জ্যাকেট গায়ে দিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করতে চাইব না। রিকিয়ার্ডি বলেন, ২০১২ সালের মার্চে ৬০ তম জন্মদিনে আইএসআইএস’র লোগোসম্বলিত জ্যাকেট পরে প্যারিসে গিয়েছিলেন তিনি। সেসময় এর জন্য তাকে ভোগান্তি না পোহাতে হলেও এখন তা ভোগান্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা তার।  

তবে ভোগান্তির আশঙ্কায় মোটেও রাগবি লিগ ফুটবল ক্লাবের নাম পরিবর্তনে আগ্রহী নন এর মুখপাত্র কেভিন গ্রান্ট। তিনি বলেন, ‘আইএসআইএস ডেভিলস’ নামের স্থানীয় টিমটির নাম পরিবর্তনের কোন ইচ্ছে তাদের নেই।

তার মতে, দীর্ঘদিন ধরে আইএসআইএস এলাকার বাসিন্দারা এ নামটি ব্যবহার করে আসছে। এখন নতুন একটি সংগঠন এসে নামটি লুফে নিয়েছে দাবি করে কেভিন বলেন, ‘আমরা এ নাম পরিবর্তন করব না।’

অবশ্য গত বছর বুন্দাবার্গ রাগবি লিগের ফাইনালে ওয়েস্টার্ন সাবার্ব প্যানথারস এর বিপক্ষে খেলার সময় দলটির নাম পরিবর্তনের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছিল।

কেভিন বলেন, ‘সেসময় লিগের তরফে আমাদেরকে নাম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল কিন্তু তখন আমরা নিজেদের অবস্থানে দৃঢ় থাকলাম। বললাম, এ লোগো ও নাম ধারণ করতেই আমরা ভালোবাসি।’

/এফইউ/ বিএ/