জলবায়ু সম্মেলনে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে উদ্বেগ

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের যে পরিকল্পনা রয়েছে তা বজায় থাকলে বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে জলবায়ু সম্মেলনে। প্যারিসে চলমান সম্মেলনে উপস্থাপিত এক নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। জলবায়ু বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকারের তরফে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।  

গবেষকদের আশঙ্কা, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মিত হলে ২০৩০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণের হার চার গুণ বেড়ে যাবে। ২০৩০ সাল নাগাদ এ প্রত্যাশিত মাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ধরা হয়েছে।

ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্রেকারের গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে ২,৪৪০টি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কার্বনের মাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হলে কার্বন নিঃসরণের হার যে মাত্রায় রাখা প্রয়োজন, তার চেয়ে বর্তমানে বিশ্বের কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কার্বন নিঃসরণের হার ১৫০ গুণ বেশি। আর সেক্ষেত্রে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মিত হলে পরিস্থিতি আরও হতাশাজনক হবে বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।  

গবেষক ড. নিকলাস হোন বলেন, ‘যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী সবগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হয়, তবে ২০৩০ সাল নাগাদ সেগুলো থেকে ৬.৫ গিগা টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হতে পারে। আর একইসময়ের মধ্যে বর্তমান আর নির্মাণের অপেক্ষায় থাকা সবগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে একসঙ্গে ১২ গিগা টন কার্বন নির্গত হতে পারে । যদি তাই হয়, তবে তা প্রত্যাশিত লক্ষমাত্রার চেয়ে ৪শগুণ বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনটিতে ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ৮টি দেশের কার্যক্রমের ওপর জোর দেয়া হয়। আইএনডিসি-এর আওতায় এসব দেশ তাদের জাতীয় কার্বন নিঃসরণের হার কমানোর পরিকল্পনা জানিয়েছে। অথচ এ দেশগুলোই আবার যত দ্রুত সম্ভব দেশের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের তোড়জোর চালাচ্ছে।  

নিউ ক্লাইমেট ইনস্টিটিউটের গবেষক মার্কাস হেইজম্যান বলেন, ‘নয়টি দেশের মধ্যে সাতটি দেশেরই কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকারকে তাদের কয়লাবিদ্যুৎ পরিকল্পনা হুমকির মুখে ফেলে।

গবেষকদের মতে পরিকল্পনায় এমন বৈপরীত্য থাকার জন্য রাজনৈতিক কারণ দায়ী। কারণ একেক সরকার একেক ধরনের পরিকল্পনা হাতে নেয়। আর ক্ষমতার লড়াইয়ে নেমে একদিকে তারা কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার করে আবার কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে সবার জন্য দ্রুত বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে দেয়ারও অঙ্গীকার করেন।  

 

আর এমন বৈপরীত্যপূর্ণ অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে আদৌ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করা যাবে কিনা সে ব্যাপারে সংশয় জানিয়েছেন গবেষকরা।

/এফইউ/বিএ/