করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় এইডস-এর একটি ওষুধ ব্যবহারে সাফল্য আসার পর বেড়েছে এর চাহিদা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবর দিয়েছে, রাশিয়ায় কালেট্রা নামক এ ওষুধ নিয়ে এরইমধ্যে অবৈধ ব্যবসা শুরু হয়েছে। অনেকে বেশি বেশি করে ওষুধ কিনে রেখে আবার তা বেশি দামে বিক্রির পাঁয়তারা করছে। এ নিয়ে উদ্বেগে পড়েছেন এইচআইভি আক্রান্তরা। সেইসঙ্গে বেড়েছে যাচ্ছেতাই ভাবে এ ওষুধ ব্যবহারজনিত বিপদের শঙ্কাও। রাশিয়ায় কালেট্রার বিক্রেতা, এইচআইভি অ্যাক্টিভিস্ট ও অন্যতম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স এসব তথ্য জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি অ্যাবভি ইংক হলো কালেট্রা ওষুধটির মূল প্রস্তুতকারক ও স্বত্তাধিকারী। কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে রাশিয়ায় ওষুধটি উৎপাদন করে আর-ফার্ম। কালিদাভির নামে বেসরকারিভাবেও উৎপাদিত হয় এ গোত্রীয় ওষুধ। কিছু ফার্মেসি ও এইডস ক্লিনিকে কালেট্রা স্বল্প পরিমাণে সরবরাহ করা হয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ ওয়ান ফার্ম জানায়, গত বছরের মার্চে ফার্মেসিগূলো মাত্র ৩৪ প্যাকেট কালেট্রা বিক্রি করেছে। আর এ বছরের মার্চে দেড় হাজারের বেশি প্যাকেট কালেট্রা বিক্রি হয়েছে।
অনলাইনে এইচআইভি’র ওষুধ বিক্রয়কারী এক ব্যক্তি রয়টার্কে বলেন, ‘তিন মাস আগে কালেট্রার তেমন একটা চাহিদা ছিল না। মানুষ আমাদের কাছ থেকে ৯০০ রুবল (১২ ডলার) দিয়ে এক বাক্স ওষুধ কিনতে পেরেছে। আর এখন এর সরবরাহ কমে গেছে। মানুষ আমাদের কাছ থেকে ১০০ থেকে ৭০০ বাক্স করে কিনতে চাচ্ছে। প্রতি বাক্সের দাম পড়ছে ৩৮০০ রুবল করে। মূলত মানুষ আমাদের কাছ থেকে কিনে পুনরায় তা উচ্চ দামে বিক্রি করতে চাইছে।’
ওই ব্যবসায়ী জানান, রিসেলাররা প্রতি বাক্স বাবদ ৭০০০-৮০০০ রুবল দাম হাঁকতে পারেন। আর এ নিয়ে উদ্বেগে আছেন এইচআইভি আক্রান্তরা। রাশিয়ায় এ মাসে নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। সোমবার (২০ এপ্রিল) নাগাদ পাওয়া হিসাব অনুযায়ী সেখানে একদিনে ৪,২৬৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ১২১ জন।
রাশিয়াতে কালেট্রা শুধু এইচআইভির চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। সেদেশের সরকার বিপুল পরিমাণে তা কিনে নেয় এবং কেবল নিবন্ধনকৃত এইচআইভি রোগীদেরকে তা বিনামূল্যে সরবরাহ করে। তবে এ ওষুধেরও সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ঘটনা অপরিচিত নয়। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে ফার্মেসি থেকে এ ওষুধ কিনে থাকেন। বিশেষ করে যেসব মানুষের রাশিয়ার পাসপোর্ট নেই এবং যারা বিভিন্ন কারণে আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে চান না তারা বেসরকারি সরবরাহের ওপর নির্ভর করে থাকেন।
আন্দ্রেই আরও বলেন, কালিদাভির ওষুধ সরবরাহ স্থিতিশীল আছে। তবে কালেট্রা এর ডিস্ট্রিবিউটররা তাকে জানিয়েছেন এটাই ফার্মেসির সর্বশেষ ডেলিভারি। কারণ এখন নতুন করে রাষ্ট্রীয় টেন্ডার পেতে হবে। কালেট্রা ওষুধটি অনলাইনে রিসেইলের ব্যাপারে জানতে চেয়ে রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।
মধ্যাঞ্চলীয় রাশিয়ার এইচআইভি একটিভিস্ট অ্যালেক্সি অভিযোগ করেন, অবৈধ ব্যবসায়ীরা এইচআইভি রোগীদের কাছ থেকে প্রতি বাক্স ৩০০০ রুবল করে কালেট্রা কিনে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। ২০টি শহরের এইচআইভি রোগীদের নিয়ে ‘ব্যাকআপ মেডিসিন কেবিনেট’ নামের একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেন অ্যালিক্সি। বিভিন্ন রোগীর বেঁচে যাওয়া ওষুধ সংগ্রহ করে ঘাটতিতে থাকা রোগীদের মাঝে তা বিতরণ করার কাজ করে এ নেটওয়ার্ক। অ্যালেক্সি জানান, এসব ওষুধ কিনতে চেয়ে প্রতিনিয়ত তাদের কাছে এখন ফোন ও মেসেজ আসছে। তিনি বলেন, ‘তারা রিসেলার ও মিডলম্যান। তারা সব কিনে নিতে চায়, এমনকি শেষ বাক্সটা পর্যন্ত। আমরা তাদেরকে থামতে বলি।’
কালেট্রা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আর-ফার্ম এর প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্সি রেপিক জানান, কালেট্রার অবৈধ বিক্রি বন্ধে তারা পুলিশকে সহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন, কোনও ওষুধ অবৈধ ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাওয়ার মানে হলো যেসব রোগীদের ওই ওষুধ প্রয়োজন তা তারা সহজে পাচ্ছে না। কালেট্রার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে রেপিক জানান, এর প্রভাবে পেটে সমস্যা, বমিভাব এমনকি যকৃত ও হৃদস্পন্দনে জটিলতা দেখা দিতে পারে। নিজে নিজে এ ওষুধ গ্রহণ করলে বিপদ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
তবে রেপিক মনে করেন না ওষুধের ঘাটতি হবে। তার দাবি, এইচআইভি ও করোনার চিকিৎসায় চিকিৎসকদের চাহিদা অনুযায়ী তারা উৎপাদন জোরালো করছেন।
কালেট্রা এইচআইভি ভাইরাসকে বাড়তে দেয় না। অতীতের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে এটিকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এটি শতভাগ প্রমাণিত কোনও ওষুধ নয় বলে মনে করিয়ে দেন রেপিক। তিনি বলেন, ‘এটা বোঝা জরুরি যে করোনাভাইরাসকে সরাসরি আক্রওমণ করতে পারবে এমন শতভাগ প্রমাণিত ওষুধ এখনও আবিষ্কার হয়নি। এ নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।’