ভারতের কৈলাস যাত্রার রাস্তা নির্মাণ নিয়ে ক্ষুব্ধ নেপাল, রাষ্ট্রদূত তলব

হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল ও নেপাল সীমান্তবর্তী উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ পাস দিয়ে নতুন একটি রাস্তা নির্মাণ শুরু করেছে ভারত। গত শুক্রবার ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই রাস্তা নির্মাণ শুরুর পরই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় নেপাল। এরই জেরে সোমবার (১১ মে) কাঠমান্ডুতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারতের দাবি নিজেদের সীমানায় নির্মিত এই রাস্তার কারণে কৈলাসের মানস সরোবরে তীর্থযাত্রীদের যাতায়াত সহজ হবে। সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।হিমালয়ের ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় রাস্তা নির্মাণ শুরু করেছে ভারত

চীনের তিব্বত অঞ্চল এবং ভারতের উত্তরাখন্ডের সীমানায় হিমালয় পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত লিপুলেখ পাস। এর দক্ষিণাঞ্চল নিজেদের বলে দাবি করে থাকে নেপাল। কালাপানি নামে পরিচিত ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে ভারত। হিমালয়ের ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় গত শুক্রবার ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা নির্মাণের উদ্বোধন করেন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।

সোমবার ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলবের পর নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক টুইট বার্তায় বলা হয়, ‘সীমান্ত ইস্যুতে নেপাল সরকারের অবস্থান ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় মোহন খাত্রাকে জানিয়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রদীপ কুমার গয়াল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে রাষ্ট্রদূতকে এই বিষয়ে কূটনেতিক নোট দেওয়া হয়েছে।’

১৮১৬ সালের এক চুক্তির অধীনে লিপুলেখ পাসের অংশ বিশেষ দাবি করে থাকে নেপাল। রাস্তা নির্মাণ শুরুর পর গত শনিবার ভারতের ‘এক তরফা’ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানায় কাঠমান্ডু। নেপাল সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের এই কর্মকাণ্ড ‘দুই দেশ যে বোঝাপড়ায় পৌঁছেছিল তার বিরোধী... ওই বোঝাপড়ায় সীমান্ত সংক্রান্ত ইস্যুগুলো পারস্পারিক আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করার কথা হয়েছিল।’

এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, নির্মিতব্য রাস্তাটি পুরোপুরি ভারতীয় সীমানায় অবস্থিত। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উত্তরাখন্ড রাজ্যের পিথোরাগড় জেলায় সম্প্রতি উদ্বোধন করা রাস্তাটি সম্পূর্ণভাবে ভারতের সীমানায় অবস্থিত। এই রাস্তাটি আগে থেকে থাকা একটি রাস্তার ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই রাস্তাটি কৈলাসের মানস সরোবর যাত্রায় তীর্থযাত্রীরা ব্যবহার করে। বর্তমান প্রকল্পের অধীনে তীর্থযাত্রী, স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের যাতায়াত সুগম করতে সেই একই রাস্তাটি চলাচল উপযোগী করা হচ্ছে।’

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিষ্পত্তির জন্য নেপাল ও ভারত নিজস্ব পদ্ধতি বানিয়ে নিয়েছে। নেপালের সঙ্গে সীমানা নির্ণয়ের কাজ চলছে। অনিষ্পন্ন সীমান্ত ইস্যুগুলো সমাধানের ক্ষেত্রে কূটনৈতিক আলোচনা এবং নেপালের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আলোকে সমাধানের জন্য ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

উল্লেখ্য, সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চীনের সঙ্গে একাধিক মতবিরোধ রয়েছে নেপালের। ২০১৫ সালে লিপুলেখ পাসকে চীন ও ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক রুট ঘোষণা করে বিবৃতি দিলে তার প্রতিবাদ জানায় কাঠমান্ডু।