বোল্টনের বই প্রকাশ ঠেকাতে শেষ মুহূর্তে মরিয়া ট্রাম্প প্রশাসন

সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের বিস্ফোরক তথ্য সম্বলিত একটি বই প্রকাশ ঠেকাতে শেষ মুহূর্তে মরিয়া হয়ে উঠেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। প্রকাশনাটি ঠেকাতে জাতীয় নিরাপত্তাকে কারণ দেখিয়ে জরুরি আদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে মার্কিন বিচার বিভাগ। তবে মার্কিন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন এতে সফল হবে না ট্রাম্প প্রশাসন। ইতোমধ্যে বইটির সারাংশ প্রকাশ করে দিয়েছে মার্কিন মিডিয়া। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে প্রভাব রেখেছেন বোল্টন

হোয়াইট হাউসে দায়িত্ব পালনের সময়ের ঘটনা নিয়ে নতুন একটি বই প্রকাশ করতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন। মার্কিন মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়া বইটির সারাংশতে জন বোল্টন জানিয়েছেন, ২০২০ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া নিশ্চিত করতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বিস্ফোরক তথ্য সামনে এনেছেন মার্কিন আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির সমর্থক জন বোল্টন। 

‘দ্য রুম হয়ার ইট হ্যাপেন’ শিরোনামে ৫৭৭ পৃষ্ঠার বইটি আগামী ২৩ জুন বিক্রি শুরুর কথা রয়েছে। জন বোল্টন বইটিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে প্রতিকৃতি হাজির করেছেন তাতে দেখা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে তার পুনর্নির্বাচিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। বইটিতে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তার বেশিরভাগই ব্যক্তিগত আলাপচারিতার ওপর ভিত্তি করে ফলে সেগুলো স্বাধীনভাবে যাচাইয়ের সুযোগ নেই।

বইটি প্রকাশ সামনে রেখে জন বোল্টনের বিরুদ্ধে কঠোর হতে শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে বলেছেন, বইটি মিথ্যা আর ভুলভাল গল্পের সমাহার। বৃহস্পতিবার এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমার সম্পর্কে বলা তার অনেক কথাই কখনো আলোচনাই হয়নি, এগুলো সম্পূর্ণ কল্পিত।... শুধুমাত্র ছাঁটাই করার শোধ নেওয়ার চেষ্টা করছে, এমন অসুস্থ কুকুর সে।’

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে খারাপ জনতুষ্টির উদাহরণ বলে মন্তব্য করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন জন বোল্টন। বুশ প্রশাসনের অধীনে জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে আসা এই সাবেক কূটনীতিককে ২০১৮ সালের এপ্রিলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরে পরের বছরের সেপ্টেম্বরেই তাকে বিদায় করে দেওয়া হয়।

বোল্টনের বইটির প্রকাশ ঠেকাতে বুধবার রাতে আদালতে জরুরি আবেদন দাখিল করেছে মার্কিন বিচার বিভাগ। এতে শুক্রবার এ সংক্রান্ত শুনানি করতে বিচারকের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি হলো যথাযথভাবে যাচাইয়ের আগেই বইটি প্রকাশ করা হচ্ছে। বিচার বিভাগের আবেদনে বলা হয়েছে, এতে এখনও গোপনীয় তথ্য রয়েছে। আর এগুলো প্রকাশ হয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। একই ধরনের যুক্তিতে এর আগেও বোল্টনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করেছে হোয়াইট হাউস।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে বইটির প্রকাশনা সংস্থা সিমন অ্যান্ড সুস্তার। মার্কিন বিচার বিভাগের আবেদনকে ‘অসার, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিরর্থক প্রচেষ্টা’ আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি।

আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের বেন উইজনার লিখেছেন, বইটির প্রকাশনা ঠেকানোর যেকোনও প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে। তিনি লিখেছেন, ‘স্বাভাবিক কারণেই সরকারি হুমকির সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার কোনও সম্পর্ক নেই। আর যা কিছু করা হচ্ছে তা শুধু স্ক্যান্ডাল আর হয়রানি এড়ানোর চেষ্টা।’