করোনা মোকাবিলায় ‘হার্ড ইমিউনিটি’র কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলার অন্যতম কৌশল হিসেবে এতোদিন ধরে 'হার্ড ইমিউনিটি'র ওপর জোর দিয়ে আসা হচ্ছে। তবে নতুন এক স্প্যানিশ গবেষণায় এখন এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত ওই গবেষণা বলছে, জরিপে অংশ নেওয়া স্পেনের ৬০ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে মাত্র পাঁচ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।noname

সাধারণভাবে বলা হয়, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ কোনও একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তখন এর সংক্রমণ ঠেকানো যাবে, হার্ড ইমিউনিটি অর্জন হবে।

স্প্যানিশ রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডির হার স্পেনের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে তিন শতাংশের নিচে। কিন্তু দেশটির যেসব এলাকায় সংক্রমণের হার বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হবার হারও সেখানে বেশি।

গবেষণা দলের একজন সদস্য বলছেন, ‘যদিও স্পেনে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার অনেক বেশি, কিন্তু বিস্তারের ব্যাপকতা বেশ কম, মানে 'হার্ড ইমিউনিটি' তৈরির জন্য পর্যাপ্ত নয়।’

তিনি বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, এবং রোগ শনাক্ত করে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন তাদের বাধ্যতামূলকভাবে আইসোলেট করার মাধ্যমেই সামনের দিনে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

ইউরোপে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় জরিপ বলে মনে করা হয়।

ল্যানসেট সাময়িকীর ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় একই ধরণের গবেষণা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রেও হয়েছে। এতে দেখা গেছে বেশিরভাগ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি 'এমনকি যেখানে সংক্রমণের হার ব্যাপক সেসব এলাকাতেও নয়।'

স্পেনের সর্বশেষ পরিস্থিতি কী?

স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে এ পর্যন্ত আড়াই লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ২৮ হাজার ৩৮৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু গত তিন সপ্তাহে দৈনিক মৃত্যুর হার এক ডিজিটে নেমে এসেছে। জুনের তৃতীয় সপ্তাহে সরকার জরুরি অবস্থা তুলে নেয়। বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়।

তিন মাসের বেশি সময় ধরে দেশটিতে ইউরোপের অন্যতম কঠোর লকডাউন চলেছে। তবে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় গালিসিয়া রাজ্যে নতুন করে মহামারি শুরু হওয়ায় কর্মকর্তারা সেখানকার ৭০ হাজার মানুষের ওপর নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন।

কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, সেখানকার পানশালাগুলো থেকে নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। স্পেনে এখনকার নিয়ম অনুযায়ী, পানশালা ও রেঁস্তোরাতে ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ যেতে পারবেন না।

গালিসিয়াতে নতুন করে ২৫৮ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে লুগো প্রদেশে রয়েছেন ১১৭ জন। কাতালোনিয়ায় নতুন করে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় শনিবার সেখানে নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

কাতালান প্রেসিডেন্ট কুইম তোরা বলেছেন বার্সেলোনার পশ্চিমের জেলা সেগ্রিয়া থেকে কেউ বের হতে পারবেন না। সেখানে কেউ নতুন প্রবেশও করতে পারবেন না। সূত্র: বিবিসি।