অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার মধ্যে বিশ্ববাসীর কাছে সবথেকে ভরসার জায়গাটা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের তৈরি করা ভ্যাকসিন। বাস্তবে এই টিকা সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? কবে নাগাদ পাওয়া যাবে এই টিকা? এর দাম কেমন পড়বে? বাংলাদেশ সময় ২১ জুলাই সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এক ভিডিওতে এই বিষয়গুলো নিয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য তুলে ধরেছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি চিকিৎসক তাসনিম জারা।
যুক্তরাজ্যে করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ‘এভিডেন্স বেজড মেডিসিন’-এর শিক্ষার্থী তাসনিম জারা। ভিডিও বার্তায় যুক্তরাজ্যে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত তাসনিম বলেন, ‘অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন যে সফল হয়েছে এমন দাবি যে বিশেষজ্ঞরা এটি তৈরি করছেন তারাও করেননি। কারণ এই ভ্যাকসিনটি যে করোনা থেকে আমাদের বাঁচাতে পারবে সেটি এখনও নিশ্চিত নয়। বরং তা জানতে ট্রায়াল বা গবেষণা এখনও চলছে। ব্রাজিল আর দক্ষিণ আফ্রিকায় পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হচ্ছে।’
তাহলে সংবাদটা কী নিয়ে হলো? কোনও সুখবরই কি নেই? তাসনিম জারা বলেন, ‘হ্যাঁ, সুখবর আছে। খুব বড় একটা সুখবরই আমরা পেয়েছি আজকে। ভ্যাকসিনটি সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে। আশাবাদী হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে একটি ভ্যাকসিন সফল কি না তা জানতে আমাদের কয়েকটি ধাপ পার করতে হয়।’
এই ধাপগুলো কী কী? গল্পের মতো করে সেটা তুলে ধরেছেন ডা. তাসনিম জারা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে একটি ক্যানডিডেট ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। অর্থাৎ এটি ভ্যাকসিন পদপ্রার্থী। পরীক্ষায় পাস করলে তবেই এটি ভ্যাকসিন হবে। থিওরি অনুযায়ী এই ক্যানডিডেট ভ্যাকসিন কাজ করার কথা। কিন্তু থিওরিতে কাজ করলে সেটি বাস্তবে কাজ নাও করতে পারে।’
ডা. জারা বলেন, ‘মানুষকে সরাসরি ভ্যাকসিন দিলে যদি ক্ষতি হয়ে যায়, সেই দুর্ঘটনা এড়াতে ভাকসিনটি প্রথমে দেওয়া হয় ল্যাবে থাকা প্রাণী যেমন- খরগোশ বা বানরের শরীরে। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়, প্রাণীর স্বাস্থ্যের কোনও ক্ষতি হচ্ছে কি না। আমাদের (বাংলাদেশের) যে গ্লোব বায়োটেকের যে ভ্যাকসিনের কথা কিছু দিন আগে শুনেছিলেন, সেখানে গবেষকরা দাবি করেছেন, এই পর্যায় পর্যন্ত অর্থাৎ প্রাণীর শরীরে ভ্যাকসিনটি সফল হয়েছে।’
তাসনিম জারা আরও বলেন, ‘এই ধাপটি পার হলে তারপর মানবদেহে প্রয়োগ করার অনুমতি চাওয়া হয়। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাইয়ের পর অনুমতি পেলে সাধারণত তিন পর্যায়ে বিভিন্ন সাবধানতা অবলম্বনের মাধ্যমে দেখা হয় ভ্যাকসিনটি মানবদেহের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর কি না। এই ক্ষেত্রে নিরাপদ ও কার্যকর আবশ্যকীয় দুটি শর্ত। এর ব্যত্যয় সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে অক্সফোর্ডে ভ্যাকসিনটি মানবদেহে নিরাপদ। কার্যকারিতা নিয়ে আশার আলো দেখা গেছে। তবে কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে।’
ডা. তাসনিম বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি মানবদেহে দুই প্রকারের শক্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। তবে এই শক্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করোনা ঠেকাতে কি পরিমাণে কয়বার ভ্যাকসিন দিলে কার্যকর হবে বা আদৌ কার্যকর হবে কি না সেটা জানা দরকার। সেটা জানার জন্যই তারা (বিশেষজ্ঞরা) দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে গিয়ে গবেষণা করছেন। যদিও প্রবল সম্ভাবনা আছে ভ্যাকসিনটি সফল হওয়ার তবে সেটি নাও হতে পারে বলে সাবধান করছেন খোদ অক্সফোর্ডের গবেষকরাই।’
ভ্যাকসিন কবে পাওয়া যাবে?
এ বিষয়ে ডা. জারা বলেন, বিষয়টি কারও পক্ষেই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। অক্সফোর্ডের গ্রুপের প্রধানকে আজকেই জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল এই বিষয়ে তিনি বলেছেন এটি বলা সম্ভব নয়। তাই কোনও সংবাদে যদি সময় বলা হয় যেমন- সেপ্টেম্বর, অক্টোবর সেটিকে পূর্বানুমান হিসেবেই দেখবেন।
দাম কেমন হতে পারে?
ডা. তাসনিম জারা বলেন, ‘গত এপ্রিল মাসে ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকা’ নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে অক্সফোর্ড। তারা একমত হয়েছে যে এই মহামারী চলাকালে ভ্যাকসিনটি কোনও লাভ ছাড়াই শুধুমাত্র উৎপাদন খরচে বাজারজাত করা হবে।'