রায়হান কবিরের পক্ষে অ্যামনেস্টির বিবৃতি

আল জাজিরায় সাক্ষাৎকার দিয়ে গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশি মো. রায়হান কবিরকে মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়া। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এ মানবাধিকার সংগঠনটির অভিযোগ, অনিবন্ধিত অভিবাসী ও শরণার্থী নিপীড়ন নিয়ে সমালোচনাকারীদের মুখ বন্ধ করতে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে মালয়েশীয় সরকার। রায়হানকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে দেশটির কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

রায়হান কবির

গত ৩ জুলাই আল-জাজিরার ইংরেজি অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ‘লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট’ শীর্ষক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ২৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ওই প্রতিবেদনে করোনাভাইরাস মহামারিতে মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে সরকারের বিরূপ আচরণ নিয়ে কথা বলেছিলেন রায়হান কবির। ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২৫ জুলাই তাকে নেওয়া হয় ১৪ দিনের রিমান্ডে।

রায়হান কবিরকে গ্রেফতার ও অভিবাসন বিভাগ কর্তৃক তাকে বিতাড়নের প্রচেষ্টার ব্যাপারে নিন্দা জানিয়ে নিজেদের ওয়েবসাইটে বিবৃতি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়া। সংগঠনের অন্তর্বর্তী নির্বাহী পরিচালক পৃথ্বী ভারদাওয়াজ বলেন, ‘অনিবন্ধিত অভিবাসী ও শরণার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ নিয়ে সমালোচনার মুখ বন্ধ করতে মালয়েশীয় সরকার স্পষ্টভাবে অভিবাসন আইনের ব্যবহার করছে ও বিতাড়নের হুমকি দিচ্ছে। আগে থেকেই প্রান্তিক অবস্থায় থাকা এ কমিউনিটিকে অপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত করা হচ্ছে এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা প্রকাশের কারণে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক।’

পৃথ্বী আরও বলেন, ‘কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই বর্ণ-জাতীয়তা নির্বিশেষে সবার জন্য মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রায়হান কবিরের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে তাকে বিতাড়নের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহারের জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

গ্রেফতারের আগেই রায়হানের ওয়ার্ক পারমিট কেড়ে নেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে এবং কোনোদিন মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।গ্রেফতারের আগে বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় রায়হান কবির নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।  বলেন, ‘আমি মিথ্যা বলিনি। আমি শুধু অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের কথা তুলে ধরেছি। আমি অভিবাসী ও আমাদের দেশের সম্মান নিশ্চিত করতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, সব অভিবাসী ও বাংলাদেশ আমার পক্ষে থাকবে।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়ার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মালয়েশিয়ায় বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে অনিবন্ধিত অভিবাসী ও শরণার্থীদের সঙ্গে যে ধরনের ভয়ঙ্কর আচরণ করা হচ্ছে, তার দিকেই আরও বেশি করে আলোকপাত করেছে রায়হান কবিরের ওই সাক্ষাৎকার। অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর ধরপাকড় বন্ধ করতে এবং অভিবাসন কেন্দ্রগুলোতে আটক থাকাদের মুক্তি দিতে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সরকারের উচিত এ করোনা মহামারিতে আন্তর্জাতিক আইন ও মানদণ্ড অনুযায়ী কিভাবে অনিবন্ধিত অভিবাসীদের সঙ্গে আচরণ করতে হবে তা নিয়ে নীতিমালা তৈরির জন্য মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও সিভিল সোসাইসি অর্গানাইজেশনের সঙ্গে সমন্বয় করা।’

২০১৪ সালে তোলারাম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে মালয়েশিয়া চলে যান রায়হান। তার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বন্দরে। রায়হানের বাবা শাহ আলম একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।