কেরালার সে রানওয়ে নিয়ে আগেও সতর্ক করা হয়েছিল

 কেরালার কোঝিকোরে বিমানবন্দরের রানওয়েকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে ৯ বছরেরও বেশি সময় আগে সতর্ক করা হয়েছিল। তখন সিভিল অ্যাভিয়েশন সেফটি অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, অন্তত বৃষ্টির সময় বিমান ওঠানামার ক্ষেত্রে রানওয়েটি অনিরাপদ। তবে এরপরও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।  

শুক্রবার (৭ আগস্ট) রাতে কেরালার কোঝিকোরে বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে দুবাই থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস বিমান আইএক্স- ১৩৪৪। ভেঙে দু’টুকরো হয়ে যায় বিমানটি। এতে দুই পাইলটসহ ১৮ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। ঘটনার পর পরই ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশনের তরফে জানানো হয়, অবতরণের পরে বিমানটির চাকা পিছলে যায়। ফলে সেটি থামতে পারেনি। রানওয়ে অতিক্রম করে পাশের ৩৫ ফুট নিচু খাদে পড়ে যায় বিমানটি। তারপরেই সেটি দু’টুকরো হয়ে যায়। কেবিনের দিকের অংশে আগুন লেগে দুই পাইলটের মৃত্যু হয়। বাকি অংশে আগুন লাগেনি।

বিমান চলাচলের পরিভাষায় কোঝিকোরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে হল ‘টেবিলটপ’। অর্থাৎ পাহাড় বা মালভূমির ওপর জমি কেটে রানওয়ে তৈরি করা হলে তাকে টেবিলটপ বিমানবন্দর বলা হয়। এই ধরনের বিমানবন্দরের রানওয়ে হয় স্বল্পদৈর্ঘ্যের। কোঝিকোরের যে রানওয়েতে দুর্ঘটনা ঘটেছে (১০ নম্বর রানওয়ে) তার দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ২,৮৫০ মিটার। স্বল্পদৈর্ঘ্যের রানওয়ের শেষেই গভীর খাদ রয়েছে। এছাড়া সেফ ল্যান্ডিংয়ের জন্য রানওয়ের দুপাশে প্রয়োজনীয় জায়গাও নেই। আর তাই বৃষ্টিতে এই ধরণের রানওয়েতে বিমান নামানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

সুইডিশ ফ্লাইট ট্র্যাকার কোম্পানি ফ্লাইটরাডার২৪ জানিয়েছে, দুবাই থেকে আসা বিমান অন্তত দু’বার কোঝিকোরে বিমানবন্দরে অবতরণের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু খারাপ আবহাওয়া থাকায় সেটি ল্যান্ড করতে পারেনি। তৃতীয়বার ল্যান্ড করার সময়েই দুর্ঘটনা ঘটে।

কোঝিকোরে বিমানবন্দরে এই সমস্যা নতুন নয়। বারবার রানওয়ের দৈর্ঘ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফলে অনেক আন্তর্জাতিক বিমানসংস্থা তাদের বোয়িং ৭৭৭ বা এয়ারবাস এ৩৩০-এর মতো বড় বিমানগুলির এই বিমানবন্দরে অবতরণ বন্ধ করে দিয়েছে।

এয়ার সেফটি বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন মোহন রঙ্গনাথন জানিয়েছেন, তিনি ৯ বছর আগে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন। সেখানে তিনি দেখিয়েছিলেন কেন এই বিমানবন্দর অবতরণের জন্য সুরক্ষিত নয়। ক্যাপ্টেন রঙ্গনাথন জানিয়েছেন, কেরালার চারটি বিমানবন্দরের মধ্যে কোঝিকোরে বিমানবন্দরের রানওয়ে সবথেকে ছোট। এছাড়া বৃষ্টিতে এই রানওয়ের অনেক ক্ষতিও হয়েছে।

ক্যাপ্টেন রঙ্গনাথন বলেন, ‘ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর আমি যে সতর্কতা দিয়েছিলাম তা গুরুত্বসহকারে দেখা হয়নি। এটি একটি টেবিল টপ রানওয়ে। এর নিচে খাদ রয়েছে। রানওয়ের শেষভাগে যে বাফার জোন রয়েছে তার দৈর্ঘ্য যথেষ্ট নয়।’ তিনি আরও জানান, বিমানবন্দরটির রানওয়ের শেষভাগে ২৪০ মিটারের বাফার জোন থাকার কথা। অথচ সেখানে ৯০ মিটারের বাফার রয়েছে। তাছাড়া রানওয়ের অপর পাশে ১০০ মিটারের বিাফার জোন থাকার কথা থাকলেও মাত্র ৭৫ মিটার জায়গা ফাঁকা আছে সেখানে।