লেবাননজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ, সরকারে অস্থিরতা

লেবাননে তীব্র সরকারবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। ক্রমেই বাড়ছে বিক্ষোভের উত্তাপ। রাস্তায় রাস্তায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়াচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে খোদ পার্লামেন্ট ভবনের সামনে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেছে একদল বিক্ষোভকারী। দেশের ভেতর থেকেই প্রকাশ্যে বিদেশি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানো হচ্ছে। এমন আহ্বানে সমর্থন দিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের ভেতরেই অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন ৯ জন এমপি এবং দুই জন প্রভাবশালী মন্ত্রী। আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। তারপরও বিক্ষোভকারীদের নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না।noname

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে-র খবরে বলা হয়েছে, কার্যত বিদ্রোহ শুরু হয়ে গিয়েছে বৈরুতে। গত শুক্রবার থেকে লেবাননের রাজধানী শহরে রাজপথের দখল নিয়েছে সাধারণ মানুষ। তাদের মুখে একটাই স্লোগান, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে। কারণ, লেবাননের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। মানুষের নিরাপত্তা দিতেও তারা ব্যর্থ হয়েছে।

শুক্রবারের পর শনি ও রবিবারও বৈরুতে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে জনতার খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে। এরপরও সোমবার ফের রাজপথে নামে বিক্ষুব্ধ লেবানিজরা।noname

সরকারবিরোধী আন্দোলন বেশ কিছুদিন আগেই শুরু হয়েছিল বৈরুতে। দেশের সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত, এই অভিযোগে গত বছর আন্দোলনে নামে তরুণরা। করোনা-কালে প্রাথমিকভাবে আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়েছিল। কিন্তু অনেকের চাকরি চলে যাওয়ায় করোনাকে উপেক্ষা করেই ফের রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ। তবে গত মঙ্গলবার যে ঘটনা ঘটেছে তারপর কার্যত ছোটখাট বিচ্ছিন্ন আন্দোলনগুলো বড় আকারে রূপ নিয়েছে।

মঙ্গলবার বৈরুত বন্দরের একটি গুদামে বিস্ফোরণ হয়। ওই গুদামে বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট রাখা ছিল। তার থেকেই বিস্ফোরণ হয়। কার্যত গোটা বৈরুত শহর কেঁপে ওঠে। দিকে দিকে বাড়িঘর ধসে পড়তে শুরু করে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ছয় হাজার। গৃহহীন হয়ে পড়েছে তিন লাখ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে ফের সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমে পড়েছে সাধারণ মানুষ। মুখে লেবাননের পতাকা রঙের মাস্ক পরে তারা দিকে দিকে সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছে। আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন সরকারি অফিসে।noname

রবিবার পার্লামেন্টের সামনে তৈরি পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশও বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পাল্টা কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। তবে আন্দোলনকারীদের কোনওভাবেই থামাতে পারছে না পুলিশ।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, সরকারকে এখনই গদি ছাড়তে হবে। নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে বিপ্লব করতে হবে। জনগণের দাবি এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছে যে, একে একে এমপি-মন্ত্রীরা পদত্যাগ করতে শুরু করেছেন। তারা কার্যত জনগণের আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছেন।noname

পদত্যাগ শুধু এমপি-মন্ত্রীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সরকারি কর্মকর্তা এমনকি রাষ্ট্রদূতের মতো স্পর্শকাতর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদেরও পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। স্পষ্টতই সবাই মেনে নিচ্ছে যে, বর্তমান সরকার মানুষকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।noname

গত শুক্রবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট লেবাননকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমূল সংস্কার না হলে দেশটির পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল। ফরাসি প্রেসিডেন্টের নিশানায় ছিল লেবানিজ সরকার। এটা স্পষ্ট যে, লেবাননে যে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে ইউরোপের কোনও কোনও প্রভাবশালী দেশ তাতে সমর্থন বা উসকানি দিচ্ছে। সূত্র: ডিডব্লিউ, রয়টার্স।