নিউ জিল্যান্ডের মসজিদে হামলাকারীর আমৃত্যু কারাদণ্ড

নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার দায়ে অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন টারান্টকে প্যারোলবিহীন আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার দেশটির হাইকোর্ট এ রায় ঘোষণা করেন। নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসে এমন সাজা এটিই প্রথম।

২০১৯ সালের মার্চে ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে হামলা চালায় উগ্রপন্থী ব্রেন্টন টারান্ট। তিন দিন ধরে চূড়ান্ত শুনানির পর বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করেন আদালত।

তিন দিন ধরে বহু প্রত্যক্ষদর্শী এবং নিহতদের পরিবারের জবানবন্দি শুনেছেন আদালত। অনেকেই আবেদন জানিয়েছিলেন, নৃশংস এই খুনিকে যেন কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডের আবেদনও এসেছিল। তবে নিউ জিল্যান্ডে মৃত্যুদণ্ডের প্রচলন নেই। তবে বর্বরোচিত এ হত্যাযজ্ঞের কঠোরতম সাজা ঘোষণা হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বার্নাবি হাওয়েজ আদালতকে বলেছেন, 'ওই হামলার জন্য বন্দুকধারী বহু বছর ধরে পরিকল্পনা করছিল। তার উদ্দেশ্যে ছিল যত বেশি সম্ভব মানুষকে হতাহত করা।'

রায় ঘোষণার সময় বিচারক বলেন, ১৭, ২৫, ৩৫ বছরের জন্য সাজা দেওয়া যেত এই সন্ত্রাসীকে। কিন্তু আদালত স্থির করেছে, তাকে সারা জীবনের জন্য জেলে পাঠাবে। কখনও প্যারোলে বাইরে বেরুতে পারবে না সে।

২০১৯ সালের ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চে পর পর দুটি মসজিদে হামলা চালায় ২৮ বছরের ব্রেন্টন। প্রথমে নূর মসজিদ এবং পরে লিনউড মসজিদে হামলা চালায় সে। হামলার আগে মুসলিমবিদ্বেষী পোস্টার শেয়ার করেছিল নিজের সোশ্যাল মিডিয়ার ওয়ালে। গোটা ঘটনাটা লাইভ স্ট্রিম করে দেখিয়েছিল সে।

১৫ মার্চ ছিল জুমার নামাজের দিন। নামাজ পড়ে বহু মানুষ বাইরে বেরুচ্ছিলেন। ঠিক সে সময়েই অতর্কিত গুলি চালাতে শুরু করে খুনি ব্রেন্টন। একের পর এক মানুষ মাটিতে লুটিয়ে পড়তে শুরু করে। মসজিদের ভেতরে ঢুকেও গুলি চালাতে থাকে ব্রেন্টন। গুলি চালিয়ে ৫১ জনকে হত্যা করে সে।  গুরুতর আহত হয় আরও ৪০ জন।

ব্রেন্টন পরে পুলিশকে জানায়, দুটি নয়, তিনটি মসজিদে হামলা চালানোর ইচ্ছে ছিল তার। শুধু তাই নয়, প্রতিটি মসজিদ পুড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। নিজের কাজের জন্য কখনও অনুশোচনা প্রকাশ করেনি ব্রেন্টন। বরং কৃতকর্মের পক্ষে সওয়াল করেছে। আদালতে প্রপাগান্ডা চালানোর চেষ্টা চালিয়েছে। তবে নিউ জিল্যান্ডের প্রশাসন প্রথম থেকেই বিষয়টি কঠোরভাবে মোকাবিলা করেছে। রায় ঘোষণার পরেই নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। সূত্র: ডিডব্লিউ, আল জাজিরা।