মুঘলরা কী করে ভারতীয়দের 'হিরো' হয়: যোগী আদিত্যনাথের প্রশ্ন

ভারতের উত্তর প্রদেশের ঐতিহাসিক আগ্রা নগরীতে নির্মাণাধীন মুঘল জাদুঘরের নাম বদলের ঘোষণা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। মারাঠা আইকন ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের নামানুসারে এটির নামকরণের ঘোষণা দিয়েছেন কট্টর ডানপন্থী এই নেতা। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজ্য সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নগরীর উন্নয়ন কাজ পর্যালোচনার এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘মুঘলরা কীভাবে আমাদের নায়ক হতে পারে?’ হিন্দু জাতীয়তাবাদী এই নেতা বলেন, আজ্ঞাবাহী মানসিকতার যেকোনও কিছু গুড়িয়ে দেবে তার সরকার। ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ

গত তিন বছর ধরে উত্তর প্রদেশের রাজ্য ক্ষমতায় রয়েছেন বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ। এই সময়ের মধ্যে রাজ্যের বেশ কিছু স্থান ও স্থাপনার নাম বদল করেছেন তিনি। ঐতিহাসিক শহর এলাহাবাদের নাম বদল করে প্রয়াগরাজ করেছেন তিনি।

জাদুঘরের নাম পরিবর্তনের পর হিন্দিতে লেখা এক টুইট বার্তায় যোগী আদিত্যনাথ লিখেছেন, ‘আগ্রায় নির্মাণাধীন জাদুঘরটি পরিচিত হবে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের নামে। আপনাদের নতুন উত্তর প্রদেশে দাসত্বের মানসিকতার কোনও প্রতীকের স্থান হবে না। শিবাজী মহারাজ আমাদের নায়ক। জয় হিন্দ, জয় ভারত।’

উত্তর প্রদেশের পূর্ববর্তী অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ২০১৫ সালে জাদুঘরটি নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পায়। দিল্লি থেকে প্রায় ২১০ কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক স্থাপনা ‘তাজ মহল’-এর কাছে ছয় একর জায়গার ওপর নির্মাণ হচ্ছে জাদুঘরটি। মুঘল সংস্কৃতি, শিল্পকলা, চিত্রশিল্প, রন্ধণশৈলী, পোশাক, মুঘল আমলের অস্ত্র-শস্ত্র এবং প্রদর্শনযোগ্য শিল্প নিদর্শন প্রাধান্য দিয়ে জাদুঘরটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।

উল্লেখ্য, প্রায় তিন শতাব্দী ধরে ভারত শাসন করেছে মুঘল সাম্রাজ্য। ১৫২৬ থেকে ১৫৪০ সালের পর আবার ১৫৫৫ সাল থেকে শুরু করে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত ভারতের বেশিরভাগ এলাকার শাসন ক্ষমতা ছিলো মুঘল শাসকদের হাতে। তাজ মহল, লাল কেল্লাসহ আগ্রা ও দিল্লির বেশ কিছু স্মারক স্থাপনা নির্মাণের কৃতিত্ব মুঘল শাসকদের। তিন শতাব্দীর শাসনকালে মুঘলেরা ভারতের হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন চালিয়েছিল কিনা তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে।

অন্যদিকে, মারাঠা রাজা ছত্রপতি শিবাজী ষোড়শ শতাব্দীর প্রখ্যাত যোদ্ধা। জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। নিজের সামরিক কুশলতা দিয়ে বিভিন্ন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য সুপরিচিত তিনি।

২০১৮ সালে যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে চড়াও হয় ভারতের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। ওই সময় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, ইতিহাস নিয়ে খেলছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার।