মার্কিন নির্বাচন: প্রয়াত বিচারপতির শূন্যতা পূরণই এখন বড় ইস্যু

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণতম বিচারপতি রুথ বেডার গিন্সবার্গের মৃত্যুর পর তার শূন্য আসন পূরণ করা নিয়ে বড় ধরনের রাজনৈতিক লড়াই শুরু হয়েছে। একে কেন্দ্র করেই এখন জমে উঠেছে নির্বাচনি লড়াই। মনে করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে গভীর বিভক্তির এ সময়ে তৃতীয় বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের কনজারভেটিভ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিস্তৃত করার সুযোগ পেয়েছেন ট্রাম্প। নির্বাচনি প্রচারণায় কিছুদিন করোনা ইস্যু থেকেও নিস্তার পাবেন তিনি। অপরদিকে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ পর্যন্ত বিচারপতির এ চেয়ারটিকে শূন্যই দেখতে চাইছে ডেমোক্র্যাটরা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সর্বোচ্চ মার্কিন আদালত সুপ্রিম কোর্ট একজন প্রধান বিচারপতি ও আটজন বিচারপতি নিয়ে গঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট মনোনীত বিচারপতিদের নিয়োগ দেয় সিনেট। একবার নিয়োগ দেওয়ার পর পদত্যাগ,অবসর বা অভিশংসন ছাড়া ওই বিচারপতিরা আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করতে পারেন। ট্রাম্প তার শাসন মেয়াদে দুইজন বিচারপতিকে নিয়োগ দিতে পেরেছেন। এবার বিচারপতি  গিন্সবার্গের মৃত্যুতে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন তা নিয়ে নতুন জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে এটি বেশ বড় ইস্যু হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে ডেভিড গেরগেনের। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘বড় ধরনের এক লড়াই হতে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনে গুরুতর প্রভাব পড়বে।’ প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় দুই কনজারভেটিভ বিচারপতিকে আজীবনের জন্য সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। ২০১৭ সালে নিয়োগ পান বিচারপতি নিল গোরসুচ আর ২০১৮ সালে নিয়োগ পান বিচারপতি কাভানাহ।

রিপাবলিকান সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককনেল শুক্রবার বলেছেন, বিচারপতি গিন্সবার্গের শূন্য আসনে ট্রাম্প যাকে মনোনীত করবেন, সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেবেন তিনি। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা চাইছে, জানুয়ারির ২০ তারিখ পর্যন্ত স্থানটি ফাঁকা রাখতে। কারণ, ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যিনি জয়ী হবেন, তিনি শপথ নেবেন ২০ জানুয়ারি।

নির্বাচনকে সামনে রেখে করোনাভাইরাস মহামারি সামলাতে ভূমিকা কেমন ছিল সে প্রশ্নটিকে এড়িয়ে যেতে চাইছেন ট্রাম্প। রাজনৈতিক কৌশল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিচারপতি গিন্সবার্গের মৃত্যুর কারণে ট্রাম্পের সে প্রচেষ্টা আরও দৃঢ় হবে।

ডেমোক্র্যাট দলীয় কৌশল নির্ধারণকারী জোয়েল পেয়নে বলেন ‘কোনও একটি সপ্তাহ যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে করোনাভাইরাস নিয়ে কথা না বলতে হয়, তবে তা তার জন্য ইতিবাচক।’

সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি হিসেবে আগেই ২০ জনের তালিকা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। সেখানে কট্টর ডানপন্থীদের আধিপত্য দেখা গেছে। প্রয়াত গিন্সবার্গ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে উদারপন্থী নারীবাদীদের অন্যতম আদর্শ। একাধারে ২৭ বছর দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।  

যুক্তরাষ্ট্রের গর্ভপাতবিরোধী সংগঠন দ্য সুসান বি. অ্যান্থনি লিস্ট একে রিপাবলিকানদের জন্য সুযোগ হিসেবে দেখছে। তারা আশা করছে, এ আসনটিতে যদি রিপাবলিকানরা স্থলাভিষিক্ত হয়, তবে গর্ভপাতবিরোধী লড়াইয়ে নতুন মোড় আসবে।

তবে প্রগতিশীল ধারার কৌশলবিদ অ্যান্ড্রু ফেল্ডমান মনে করেন, গর্ভপাতের অধিকার ক্ষুণ্ন হলে আরও বেশি করে নারীদের ভোট হারাবেন ট্রাম্প।

ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন এখনও সম্ভাব্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করেননি। তবে তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর কোনও বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ পেলে তিনি কোনও কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে বেছে নেবেন।