ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের, সমালোচনায় ইইউ

ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এ ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি তেহরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টার অভিযোগ করেন।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এবারের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচির লাগাম টেনে ধরতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে পম্পেও যখন নতুন এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন তখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিফেন মানুচিন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার তার পাশে ছিলেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যাশা, জাতিসংঘও যেন ইরানের ওপর অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিও যেন এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে। তবে তার এমন আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে ইউরোপীয় দেশগুলো।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। পরমাণু চুক্তির যৌথ কমিশনের প্রধান হিসেবে তিনি এই চুক্তি অক্ষত রাখতে সর্বশক্তি প্রয়োগের অঙ্গীকার করেছেন।

ইরানকে ‘শায়েস্তা করতে’ ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক স্তরে যতই চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, সেই নীতি ততই বাধার মুখে পড়ছে। ২০১৮ সালে ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এখন সেই চুক্তিকে অবলম্বন করে তেহরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা চাপানোর জোরালো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। রাশিয়া ও চীন তো বটেই এমনকি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো সহযোগী দেশও ওয়াশিংটনের চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে নারাজ।

তা সত্ত্বেও মার্কিন প্রশাসন দাবি করেছে যে, শনিবার থেকে ইরানের উপর ‘স্ন্যাপব্যাক’ নিষেধাজ্ঞা চাপানো হলো।

এর একদিনের মাথায় রবিবার যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সাফ জানিয়ে দিলেন যে, একতরফাভাবে ইরানের উপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা চাপানোর অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের নেই। বরং চুক্তি ত্যাগ করায় তাদের যতটুকু আইনি ক্ষমতা ছিল সেটিও তারা হারিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধানের সঙ্গে মিলে তারা সরকারিভাবে নিজ নিজ দেশের এমন অবস্থান স্পষ্ট করেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি এক যৌথ বিবৃতিতে মনে করিয়ে দিয়েছে যে, তারা পরমাণু চুক্তি অক্ষত রাখতে অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়েছে। ভবিষ্যতেও এমন প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস-ও ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর মার্কিন প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত না পেলে জাতিসংঘ ইরানের ওপর আবার নতুন করে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিরোধী।

সোমবার থেকে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের অনুগত ইসরায়েলের মতো হাতে গোনা কিছু দেশ ওয়াশিংটনের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাবি আশকেনাজি মার্কিন উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে ইরানবিরোধী নিষেধাজ্ঞায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউরোপীয় দেশগুলির এই জোরালো অবস্থানকে ওয়াশিংটনের জন্য বড় আকারের কূটনৈতিক পরাজয় হিসেবে দেখছে ইরান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান রুহানি বলেছেন, তার দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর লক্ষ্যে জোট গড়ে তোলার মার্কিন উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। সূত্র: বিবিসি, ডিডব্লিউ।