প্রয়োজনে আর্মেনিয়াকে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত রাশিয়ার

কারাবাখ ইস্যুতে আর্মেনিয়ার প্রতি রাশিয়ার প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকলেও এ সংঘাতে এখনও সরাসরি কোনও পক্ষ নেয়নি রাশিয়া। তবে শনিবার প্রয়োজনে আর্মেনিয়াকে সরাসরি সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটি। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কারাবাখ ছাড়িয়ে সংঘাত আর্মেনিয়ার মূল ভূখণ্ডে পর্যন্ত পৌঁছালে আর্মেনিয়াকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে মস্কো।

এর আগে আজারবাইজানের সঙ্গে চলমান সংঘাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সহযোগিতা চান আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান। যুদ্ধবিরতির সর্বশেষ উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর শনিবার তিনি নিরাপত্তা ইস্যুতে জরুরিভিত্তিতে সহায়তার জন্য পুতিনের প্রতি আহ্বান জানান।

নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের পুরনো সংঘাত গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে আবার শুরু হয়। এরইমধ্যে সংঘাতে প্রাণহানি হয়েছে প্রায় দুই হাজার মানুষের। সংঘাত নিরসনে রাশিয়ার উদ্যোগে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান দুটি অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে পৌঁছার পরও লড়াই থামেনি। সবশেষ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সংঘাত নিরসনের প্রচেষ্টা চালানো হয়। এর অংশ হিসেবে তৃতীয় দফার অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছায় দুই দেশ। সেটিও ব্যর্থ হলে শুক্রবার পুনরায় অস্ত্রবিরতির আলোচনায় বসলেও কোনও সমঝোতা হয়নি।

শুক্রবার জেনেভায় আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর পুতিনের কাছে একটি চিঠি লিখেছেন পাশিনিয়ান। এতে আজারবাইজানের সঙ্গে চলমান সংঘর্ষ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।

আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুতিনকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে আর্মেনীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে জরুরি ভিত্তিতে পরামর্শ শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে করে আর্মেনিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়া কোনও ধরনের ও কী পরিমাণে সহযোগিতা দিতে পারবে তা নির্দিষ্ট করা যায়।

রাশিয়া এর আগে জানিয়েছে যে, আর্মেনিয়ার সঙ্গে তাদের প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে। তবে কারাবাখের সংঘাত ওই চুক্তির আওতায় পড়ে না। কেননা  এটি দেশটির মূল ভূখণ্ড নয়। তবে পাশনিয়ান চিঠিতে পুতিনকে বলেছেন, চলমান সংঘাত আর্মেনিয়া সীমান্তের কাছাকাছি চলে আসছে এবং আজারবাইজানকে জোরালো সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক।

তিনি মস্কোকে সহায়তার অনুরোধ জানান। দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও ১৯৯৭ সালের বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও দ্বিপক্ষীয় সহায়তার চুক্তি পুনরায় সক্রিয় করার আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলটি আজারবাইজানের ভেতরে অবস্থিত হলেও ইয়েরেভান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করছে আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। ১৯৮০-এর দশকের শেষদিকে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মুহূর্তে সংঘর্ষ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। ১৯৯৪ সালে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত এই সংঘর্ষে ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়। পরে ২০১৬ সালের শুরুতেও সংঘাতে জড়ায় দুই পক্ষ। সূত্র: ডেইলি সাবাহ।