ফরাসি পণ্য বর্জন করবে পাকিস্তান?

ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভ থেকে সরে এসেছে পাকিস্তানের একটি ইসলামপন্থী দল। কট্টরপন্থী তেহরিক-ই-লাব্বায়িক পাকিস্তান (টিএলপি) দাবি করেছে, পাকিস্তান সরকার ইতোমধ্যে ফরাসি পণ্য বর্জন অনুমোদন করায় বিক্ষোভ থেকে সরে এসেছে তারা। তবে এই বর্জন কীভাবে কার্যকর হবে তাও নিশ্চিত করতে পারেনি দলটি। অন্যদিকে দেশটির সরকার জানিয়েছে, এই বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।ফরাসি প্রেসিডেন্টের কুশপুত্তলিকা পোড়ায় পাকিস্তানের বিক্ষোভকারীরা

মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্লাসে মহানবী (সা.) ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের জেরে এক মুসলিম উগ্রবাদীর হাতে একজন ইতিহাসের শিক্ষককে হত্যার শিকার হওয়ার পর থেকেই উত্তপ্ত ফ্রান্স। ওই ঘটনার পর ‘ধর্মনিরপেক্ষ ফরাসি জাতীয়তাবাদ’-এর বিপরীতে ‘ইসলামি বিচ্ছিন্নতাবাদী’দের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। একই সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন তিনি। তার এ ঘোষণায় মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। মুসলিম দেশগুলোতে ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হলেও কোনও দেশই এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে এই সিদ্ধান্ত নেয়নি।

ইসলাম নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে অন্যতম পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে টিএলপি’র মতো কিছু গোষ্ঠী আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেছে। গত রবিবার থেকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে রেখেছে টিএলপি সমর্থকরা। তবে সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়েছে বলে দলটির নেতারা ঘোষণা দেওয়ার পর ওই অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

টিএলপি’র মুখপাত্র এজাজ আশরাফি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে ফরাসি পণ্য বর্জন করতে সরকার একটি চুক্তি স্বাক্ষর করায় আমরা বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’ কথিত ওই চুক্তির একটি কপি সাংবাদিকদের দেখানো হয়। যাতে দেশটির ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর স্বাক্ষর রয়েছে বলে দেখা গেছে। এছাড়া টিএলপি জানিয়েছে, পাকিস্তান থেকে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করা হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত পার্লামেন্টকে নেওয়ার সুযোগ দেবে সরকার।

তবে কথিত ওই চুক্তি নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি পাকিস্তান সরকার। মঙ্গলবার দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, এই ইস্যুটি এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাহিদ হাফিজ চৌধুরী বলেন, ‘পাকিস্তান এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি; সময় হলে সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করা হবে।’

উল্লেখ্য, ধর্ম অবমাননা ইস্যুতে অতীতেও পাকিস্তানে বড় বড় বিক্ষোভের আয়োজন করেছে টিএলপি। খাদিম হুসেন রিজভির নেতৃত্বাধীন দলটি ২০১১ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মুমতাজ কাদরির ফাঁসির বিরোধিতা করে দেশজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি পায়। ধর্ম অবমাননা আইনের বিরুদ্ধে কথা বলায় পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসিরকে হত্যার দায়ে ওই কর্মকর্তাকে ফাঁসির দণ্ড দেয় আদালত। এছাড়া ২০১৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে কেন্দ্রীয় রাজধানী কয়েক সপ্তাহ ধরে অচল করে দিয়ে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে দলটি। তবে গত বছর ধর্ম অবমাননায় অভিযুক্ত খ্রিস্টান নারী আসিয়া বিবির মুক্তির পর সহিংস বিক্ষোভে জড়িত থাকার দায়ে টিএলপি’র বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হয়।