আল কায়েদার নতুন ঘাঁটি ইরান: পম্পেও

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও দাবি করেছেন, আল কায়েদার নতুন ঘাঁটি ইরান। মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এমন দাবি করেন। তবে নিজের এমন বক্তব্যের পক্ষে কোনও প্রমাণ দেননি তিনি। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

ইরানের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ অভিযোগ প্রত্যাখান করা হয়েছে। মাইক পম্পেও-র দাবিকে জেনেশুনে মিথ্যাচার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ।

প্রেস ক্লাবে দেওয়া ভাষণে পম্পেও বলেন, আল কায়েদার একটি নতুন ঘাঁটি তৈরি হয়েছে। এটি হচ্ছে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান। আমি বলবো, আল কায়েদার মূল ভৌগোলিক কেন্দ্র হিসেবে ইরান আসলেই নতুন আফগানিস্তান। তবে বাস্তবতা তার চেয়েও খারাপ।

আল কায়দা তার নেতৃত্বকে তেহরানে কেন্দ্রীভূত করেছে। দলটির নেতা আইমান আল জাওয়াহিরির সহকারীরা বর্তমানে সেখানে রয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইরানে আল কায়েদা আফগানিস্তানের মতো পাহাড়ে লুকিয়ে নেই। সেখানে তারা তেহরানের কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে কাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে ইরানকে আরও চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান পম্পেও।

হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র আট দিন আগে পম্পেও-র এমন দাবি নিয়ে এরইমধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ইরানের বিরুদ্ধে বেপরোয়া পদক্ষেপ নিতে পারেন।

প্রেস ক্লাবে দেওয়া ভাষণে অবশ্য সামরিক পদক্ষেপের ঝুঁকির কথা জানান পম্পেও। তিনি বলেন, আমাদের যদি সেই (সামরিক পদক্ষেপ) বিকল্পটি থাকে এবং সেটিই আমরা বেছে নিই তাহলে এটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে আরও অনেক বেশি ঝুঁকি রয়েছে।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে তেহরানকে প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে গত ডিসেম্বরে তিন দফায় উপসাগরীয় অঞ্চলের আকাশে টহল দেয় মার্কিন বি-৫২ বোমারু বিমান।

২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি ইরাক সরকারের আমন্ত্রণে দেশটি সফরে যান ইরানের প্রভাবশালী কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি। এ সফর চলাকালে বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনার পর ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। ইরাকের ইরান সমর্থিত বিদ্রোহীরা এসব হামলা চালায়। তবে তেহরানের দাবি, সোলাইমানি হত্যার মূল প্রতিশোধ নেওয়া এখনও বাকি রয়েছে এবং এর কঠোর প্রতিশোধ নেওয়া হবে।

সম্প্রতি ইরানের কুদস ফোর্সের বর্তমান কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল ঘানি বলেছেন, ইরান এখনও জবাব দিতে প্রস্তুত আছে। যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, ‘তোমরা যে অপরাধ করেছো তার মাধ্যমে বিশ্বের সকল স্বাধীনতাকামী মানুষকে নতুন এক দায়িত্বের দায়ে আবদ্ধ করে ফেলেছো। কাজেই আমেরিকার ভেতর থেকেই যদি কেউ এই অপরাধের প্রতিশোধ নিতে চায় তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। অপকর্ম করে আমেরিকান বাহিনী কুদস বাহিনীকে প্রতিরোধের পথ থেকে পিছপা করতে পারবে না।’সোলাইমানি হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইরানের এমন আক্রমণাত্মক বক্তব্যের মধ্যেই দেশটিতে আল কায়েদার উপস্থিতির দাবি তুললেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।