ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং ওমাবার দক্ষ কূটনীতি

দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে আমলে নিয়েই ইরানে সীমিত পর্যায়ের নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আদতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া ছিলো। অপেক্ষা ছিলো কেবল ইরানে আটক থাকা মার্কিন বন্দিদের মুক্ত করার। পাশাপাশি পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে রিপাবলিকানদের নেতিবাচক প্রচারণা মোকাবেলা করতেও ডেমোক্র্যাট সরকারের তরফে সীমিত পর্যায়ের এই নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

গত বছর, ৩০ ডিসেম্বর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে সহায়তাকারী ইরান-সংশ্লিষ্ট দুটি নেটওয়ার্কের ওপর অবরোধ আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে ট্রেজারি বিভাগ। তবে এর দুইদিনের মাথায় বার্তা সংস্থা এএফপি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যের বরাতে জানায়, আপাতত ট্রেজারি বিভাগের অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তখন বলা হয়েছিলো, পরমাণু চুক্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে এমন আশঙ্কায় নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে কূটনৈতিক তৎপরতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন।

ইরানের ওপর নতুন অবরোধ

তবে গতকাল (রবিবার) ‘পরমাণু চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের’ পর আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের একদিনের মাথায় ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কথা বলে নতুন করে ইরানের ওপর সীমিত পর্যায়ের নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিষেধাজ্ঞা ইরানের ১১টি কোম্পানি ও ব্যক্তির ক্ষেত্রে আরোপ করা হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছে, আসলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রদপ্তর ইরানে বন্দি থাকা মার্কিন নাগরিকদের নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন। হঠাৎ করে নতুন অবরোধ আরোপ করলে তাদের মুক্ত করা কঠিন হয়ে যেতে পারে বলে মনে করেছিলো পররাষ্ট্র দপ্তর। সে কারণেই নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপে সময় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি

গতকাল (১৭ জানুয়ারি) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, নতুন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত এসেছে ইরানে বন্দি তিন মার্কিন নাগরিকের মুক্ত হয়ে তেহরান ছাড়ার তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর। সুইজারল্যান্ডের একটি বিমানে করে মুক্ত ৫ মার্কিন বন্দির ৩ জন তেহরান ছেড়েছেন, এই তথ্য জানার কয়েক মুহূর্তের মাথায় নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্তের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। রয়টার্সের খবরে জানা গেছে, এরইমধ্যে ওই মুক্ত মার্কিনিরা জার্মানিতে পৌঁছেছেন। পরমাণু চুক্তির অংশ হিসেবেই ওয়াশিংটন-তেহরান বন্দি বিনিময়ের সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে আটক ৭ ইরানি এবং ইরানে আটক ৫ মার্কিনি মুক্তি পেয়েছেন।

ইরান ছেড়েছেন মার্কিন বন্দিরা

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইরান থেকে মার্কিন বন্দিদের মুক্ত করার পর নতুন এই অবরোধ আরোপ করে ওবামা প্রশাসন বার্তা দিতে চেয়েছে, যে পরমাণু চুক্তির সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো না। নতুন অবরোধের মধ্য দিয়ে ওবামা প্রশাসন বোঝাতে চেয়েছে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তার সরকারের শক্ত অবস্থান রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অবরোধ প্রত্যাহার এবং বন্দিদের তেহরান ছাড়ার তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর নতুন করে সীমিত পর্যায়ের অবরোধ আরোপ করে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ওবামা বলেছেন, পরমাণু অস্ত্র প্রসঙ্গে মার্কিন বন্দিদেরকে ইরান থেকে মুক্ত করানোর জন্য তেহরানের সঙ্গে তিনি যে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার নীতি গ্রহণ করেছিলেন সেটির যথার্থতা নিয়ে এখন আর কোনও প্রশ্ন থাকবে না।

বারাক ওবামা

বন্দিদের মুক্ত করার পর নতুন অবরোধের সিদ্ধান্তকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো ওবামা প্রশাসনের কূটনৈতিক বিজয় হিসেবেই দেখছে। তবে নতুন নিষেধাজ্ঞার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তেহরান। তারা বলেছে, এর আইনগত এবং নৈতিক কোন ভিত্তি নেই। যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করা অস্ত্র ব্যবহার করে লেবানন-প্যালেস্টাইন-ইয়েমেনে যুদ্ধারপাধ সংঘটিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছে তেহরান। সূত্র: বিবিসি, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, নিউ ইয়র্ক টাইমস, এএফপি, রয়টার্স, মিডল ইস্ট আই

/বিএ/