পশ্চিমা খ্যাদ্যাভাসে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে রোগ

বিশ্ব জুড়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা সুস্থ কোষ এবং শরীরে অনুপ্রবেশ করা অণুজীবের মধ্যে আর পার্থক্য করতে পারছে না। ফলে রোগের বিরুদ্ধে যা এক সময় প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করেছে তা এখন মানুষের টিস্যু এবং প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করছে।  

এই প্রবণতা মোকাবিলায় বড় বড় আন্তর্জাতিক গবেষণা হয়েছে। একে বলা হচ্ছে অটোইমিউন অসুখ। লন্ডনের ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের দুই বিশেষজ্ঞ এই প্রবণতার সুনির্দিষ্ট কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন। এই দুই বিশেষজ্ঞ হলেন জেমস লি এবং ক্যারোলা ভিনুয়েসা।

জেমস লি জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে পশ্চিমে অটোইমিউন রোগীদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। বর্তমানে কয়েকটি দেশে এই রোগ বাড়তে দেখা যাচ্ছে, সেসব দেশে আগে এই ধরণের রোগের অস্তিত্ব ছিল না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব এশিয়ায় পেটের প্রদাহ জনিত অসুস্থতা বেড়েছে। অথচ আগে এসব অঞ্চলে এধরণের রোগের কথা কমই জানা যেত।

অটোইমিউন রোগ বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। টাইপ ১ ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে আর্থারাইটিস, পেটের প্রদাহ থেকে শুরু করে ধমনীর অস্বাভাবিকতা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা সংক্রমণকারী অণুজীবের বদলে সুস্থ কোষ আক্রান্ত করে। কেবল যুক্তরাজ্যেই এই ধরণের রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি। কেউ কেউ ভুগছেন একাধিক রোগে।

বেশিরভাগ বিজ্ঞানীর বিশ্বাস এই বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে পরিবেশগত প্রভাবক। জেমস লি বলেন, ‘গত কয়েক দশকে মানুষের জিন বদল হয়ে যায়নি। ফলে বাইরের দুনিয়ার কিছু একটা অবশ্যই বদলেছে যাতে করে অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত বাড়ছে।’

ওই মতকে সমর্থন করছেন ক্যারোলা ভিনুয়েসা। এক সময়ে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কাজ করে আসা ভিনুয়েসা মনে করেন এই পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে মানুষের খ্যাদ্যাভাস। তিনি জানান, যেসব দেশ আরও বেশি পশ্চিমা ধাঁচের খাবারের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন এবং বেশি ফাস্ট ফুড কিনছেন সেসব দেশে এই রোগ বাড়ছে।

ভিনুয়েসা বলেন, ‘ফাস্ট- ফুড খাদ্যাভ্যাসে আঁশের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের ঘাটতি রয়েছে আর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, এই পরিবর্তন ব্যক্তির সেইসব অণুজীবের ওপর প্রভাব ফেলছে যেগুলো শারিরীক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি বলেন, এই পরিবর্তন মানুষের ওপর প্রভাব ফেলছে আর অটোইমিউন রোগের সূচনা ঘটাচ্ছে। বর্তমানে শতাধিক এই ধরণের রোগের কথা জানা গেছে বলেও জানান তিনি।

সূত্র: গার্ডিয়ান