গণতান্ত্রিক যাত্রাপথের ঐতিহাসিক লগ্ন

অর্ধ শতকেরও বেশি সময়ের সামরিক শাসনের পর বহুল প্রতিক্ষীত একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোয় যাত্রা শুরু হলো মিয়ানমারের। গত বছরের ৮ নভেম্বর ঐতিহাসিক নির্বাচনে সু চি’র দলের জয়লাভের পর সোমবার সকালে প্রথমবারের মতো দেশটির নতুন পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।  সেনাবাহিনীর গাঢ় সবুজ রঙকে ছাপিয়ে এদিন কমলা রঙের পোশাকে আসেন সংখ্যাগরিষ্ঠ এনএলডির সদস্যরা। এ যেন গণতন্ত্র যাত্রার প্রতিকী অভিপ্রকাশ। 

গণতন্ত্রে যাত্রার ঐতিহাসিক লগ্নে নিজ দলের শতাধিক এমপিকে নিয়ে পার্লামেন্টে যোগ দেন দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি। এই মুহূর্তটির জন্য ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছিলেন সু চি। অপেক্ষা করছিলো দেশের জনগণ।

পার্লামেন্টে প্রবেশের সময় সু চি’র খোপায় দেওয়া ফুল সবার নজর কাড়ে। এছাড়া তার দল এনএলডি’র সদস্যরা পরেছিলেন কমলা রঙয়ের পোশাক; যা সেনাবাহিনীর গাঢ় সবুজকে ছাড়িয়ে যায়। তবে পার্লামেন্টে প্রবেশের সময় কোনও মন্তব্য করেননি সু চি।

 

অধিবেশনকালে পার্লামেন্টের চিত্র, ছবি এএফপি

 

এনএলডি’র এমপি ইউ মিন ও বলেন, ‘আমি এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হলাম। কিন্তু এবারের বিষয়টা আলাদা, কারণ এবারের পার্লামেন্টে এনএলডি’র নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। কিন্তু আমরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে এসেছি এবং আমরা বৈচিত্র্যের নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’

৬৬৪ আসনের পার্লামেন্টে মোট নির্বাচিত এমপির সংখ্যা ৪৯১। এর মধ্যে সু চি’র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) থেকে থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৩৯০ জন।

সু চি’র দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও দেশটির পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর প্রভাব থাকছে। কারণ তাদের জন্য ১৬৬টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও থাকছে তাদের হাতে।

নতুন পার্লামেন্টের বড় কাজ হবে একজন নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা। যিনি আগামী ৫ বছর দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হবেন। পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে সু চি’র আইনি বিধিনিষেধ রয়েছে। মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, কোনও বিদেশিকে বিয়ে করলে বা সন্তানদের কেউ অন্য দেশের নাগরিক হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সু চি’র স্বামী মাইকেল অ্যারিস ছিলেন একজন ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ। তার দুই সন্তানও ব্রিটিশ নাগরিক।

পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের অধিবেশনের পর বেরিয়ে যাচ্ছেন সু চি, ছবি এএফপি

বর্তমান প্রেসিডেন্ট থিন সেইন আগামী মার্চের শেষ পর্যন্ত মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন। এরপরই দায়িত্ব নেবেন নতুন প্রেসিডেন্ট।

১৯৬২ সাল থেকে মিয়ানমারের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এ সময়ের মধ্যে জান্তা সরকারের রোষানলে ১৫ বছর সু চি’কে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটাতে হয়েছে। গত ২০ বছর ধরে মিয়ানমারে সু চি’র দলকে সরকারের প্রতিপক্ষ মনে করা হতো। এ সময়ে দলটির বহু নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সময়ের পরিবর্তনে পার্লামেন্টের বৃহত্তম দল হিসেবে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান।

/এমপি/বিএ/