ইনস্টাগ্রাম স্টোরির জন্য গৃহবন্দি রুশ ছাত্রী

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ওলেসিয়া ক্রিভতসোভা ক্লাসে যেতে পারছেন না। কারণ ২০ বছর বয়সী ওলেসিয়া এখন গৃহবন্দি। তার পায়ে একটি ইলেকট্রনিক ট্যাগ আছে। এতে পুলিশ তার প্রতিটি গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

সোশাল মিডিয়ায় যুদ্ধবিরোধী পোস্টের জন্য ওলেসিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিবিসিকে ওলেসিয়া বলেন, ‘আমি রাশিয়াকে সংযুক্ত করা ক্রিমিয়ার সঙ্গে যুক্ত সেতুতে বিস্ফোরণের বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। সেতুটি সম্পর্কে একটি ইনস্টাগ্রাম স্টোরি পোস্ট করি। যা ঘটেছে তাতে ইউক্রেনীয়রা কতটা খুশি হয়েছে, সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম।’

ওলেসিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে এক বন্ধুর পোস্টও শেয়ার করেছিলেন। তারপরই শুরু হয় নাটকীয়তা।

একটু ভেবে ওলেসিয়া বলেন, ‘ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম। এ সময় সদর দরজা খোলার শব্দ পাই। অনেক পুলিশ এসেছিল। তারা আমার ফোনটা কেড়ে নেয়।’

ওলেসিয়ার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ এবং রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনীকে অসম্মান করার অভিযোগ আনা হয়েছে। অপরাধ প্রমাণ হলে তার ১০ বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে।

ওলেসিয়া বলেন, ‘ইন্টারনেটে কিছু পোস্ট করার জন্য কাউকে এমন লম্বা সময়ের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে, সেটা কল্পনাও করিনি। আমি রাশিয়ায় সেই উদ্ভট রায় দেখেছি এবং সেটি ভুলে থাকার চেষ্টা করছি।’

আরখানগেলস্কের নর্দার্ন ফেডারেল ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ওলেসিয়ার নাম এখন রাশিয়া সরকারের সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের তালিকায়। ওলেসিয়া বলেন, ‘যখন জানতে পারি আমাকে স্কুল শুটার এবং ইসলামিক স্টেট গ্রুপের মতো তালিকায় রাখা হয়েছে, তখন সবকিছু এলোমেলো লাগছিল।’

গৃহবন্দি অবস্থায় ওলেসিয়া ফোনে কথা বলতে পারবেন না, অনলাইনেও তার যাওয়া নিষেধ।

ওলেসিয়া বলেন, ‘এক বন্ধু একটি চ্যাটে আমার সম্পর্কে একটি পোস্ট দেখিয়েছিল। আমি কীভাবে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’-এর বিরুদ্ধে ছিলাম... সে সম্পর্কে। এই গ্রুপের বেশিরভাগই ছিল ইতিহাসের শিক্ষার্থী। তারা আলোচনা করছিল, কর্তৃপক্ষের কাছে আমার নামে বিচার দেবে কি না।’

 

qwe

 

বিবিসি ওই গ্রুপ চ্যাটটি যাচাই করেছে। একটি মন্তব্যে ওলেসিয়াকে একজন পরাজয়বাদী এবং চরমপন্থী চরিত্রের উস্কানিমূলক পোস্ট লেখার জন্য অভিযুক্ত করা হয়।

একটি মন্তব্যে লেখা হয়, ‘আসুন প্রথমে তাকে আটকানোর চেষ্টা করি, ব্যর্থ হলে নিরাপত্তা সংস্থাকে খবর দিব।’

ওলেসিয়ার পক্ষেও ছিল কয়েকটি মন্তব্য। একজন লেখেন, ‘নিন্দা বা সমালোচনা করা একজন দেশপ্রেমিকের কর্তব্য।’

পরে যখন প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের তালিকা আদালতে পড়ে শোনানো হয়, ওলেসিয়া ওই গ্রুপের সদস্যদের নামগুলো চিনতে পারে।

ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর একটি বছর কেটে গেছে। হামলার কয়েক সপ্তাহ পর প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ান জনগণকে ধূর্ত এবং বিশ্বাসঘাতকদের থেকে সত্যিকারের দেশপ্রেমিকদের আলাদা করার আহ্বান জানান।

তারপর থেকে যুদ্ধের সমালোচকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে রুশ সরকারকে। এ কাজে সরকার ছাত্র-শিক্ষকদের যুক্ত করে। তারা তাদের সহপাঠী বা সহকর্মীদের ওপর নজরদারি চালিয়ে থাকেন।    

রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনের আক্রমণের জন্য জনগণের কাছে জোরালো সমর্থন আশা করে। কেউ যদি এটি সমর্থন না করে, তবে সরকার তাকে চুপ থাকার পরামর্শ দেয়। আর তা না করলে ভিন্নমত দমনে কঠোর আইন প্রয়োগে দ্বিতীয়বার ভাবে না প্রশাসন।

পরদিন আদালতের শুনানিতে অংশ নিতে ওলেশিয়াকে তার ফ্ল্যাট থেকে বের হতে দেওয়া হয়। ওলেশিয়ার আইনজীবীরা তার চলাফেরার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন। বিচারক তাকে গৃহবন্দী রাখার নির্দেশ দেন।

ওলেসিয়া বলেন, ‘রাষ্ট্র (রাশিয়া) বিতর্ক, গণতন্ত্র বা স্বাধীনতা হজম করতে পারে না। তারা কিন্তু এতো  মানুষকে জেলেও রাখতে পারবে না। এক সময় তাদের জায়গা (জেল) ফুরিয়ে যাবে।’ সূত্র: বিবিসি