সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য প্রস্তাবিত চুক্তি নিয়ে আলোচনায় ধারণাতীত মতভেদ দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতভর আলোচনার পরও সমঝোতা না হওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন নেতার সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করে যাচ্ছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। পরে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
বেলজিয়ামের স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। প্রথম দিনের আলোচনা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে টাস্ক জানান, আলোচনায় সামান্য কিছু অগ্রগতি হয়েছে তবে আরও অনেক দূর যেতে হবে।
শুক্রবার সকাল থেকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। তবে এখনও ধারণাতীত মতভেদ রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী ম্যাটিও রেনজি বলছেন, সমঝোতার ব্যাপারে আগের চেয়ে তার আশাবাদ কমে গিয়েছে। তবে ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী জুহা সিপিলা মনে করছেন শুক্রবারের আলোচনার মধ্য দিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। একই ধরনের আশাবাদ শোনা গেছে স্পেনের মারিয়ানো রাজোয় এর কণ্ঠেও। আর ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট্টে মনে করেন আলোচনা শনিবার পর্যন্ত গড়াতে পারে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভূক্ত থাকা না থাকার প্রশ্নে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলেও শরণার্থী ইস্যুতে টাস্ক আর জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের মধ্যে আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। শরণার্থী ইস্যুকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মার্চে তুরস্কের সঙ্গে বিশেষ সম্মেলন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এর আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্ত থাকা না থাকার প্রশ্নে তার দেওয়া শর্তগুলো পূরণ হবে কিনা তা নিশ্চিত না হয়েই ব্রাসেলসে চলমান আলোচনায় যোগ দিয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করে গার্ডিয়ান। ইইউ’র সঙ্গে যুক্তরাজ্যের থাকা না থাকার প্রশ্নে তৈরি করা পরিকল্পনার চূড়ান্ত খসড়াটি ফাঁস হওয়ার পর এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানায় সংবাদমাধ্যমটি।
গার্ডিয়ান জানায়, ব্রাসেলসে তৈরি করা নথিগুলো বৃহস্পতিবার সকালে ফাঁস হয়। বুধবার রাতে ইইউভুক্ত দেশগুলোর রাজধানীতে নথিগুলো পাঠানো হয়েছিল এবং সেই নথি গার্ডিয়ানের হাতেও পৌঁছায়। নথিতে দেখা যায়, লিসবন চুক্তিতে পরিবর্তন আনার জন্য ক্যামেরন-প্রস্তাবিত চুক্তির দুটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ইইউ নেতাদের সম্মতি আদায়ে ব্যর্থ হয়েছেন ডোনাল্ড টাস্ক। ক্যামেরন চান ‘ইউরোপের জনগণের জন্য আগের চেয়ে আরও ঘনিষ্ঠ’ একটি ইউনিয়ন গড়ার জন্য ইইউ’র প্রতিশ্রুতি থেকে যুক্তরাজ্যের অব্যাহতি এবং ইউরো অঞ্চলভুক্ত রাষ্ট্র নয় এমন দেশগুলোর সঙ্গে ব্রিটেনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুরক্ষার নিশ্চয়তা।
এ দুটো মূল দাবির পাশাপাশি শিশুদের ভাতা প্রদানের ওপর কড়াকড়ি এবং ইইউ’র অভিবাসী শ্রমিকদের সুবিধা ভাতা বন্ধ করারও প্রস্তাব দিয়েছেন ক্যামেরন। বুধবার যুক্তরাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, দেশটিতে ইইউভুক্ত অন্য দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসীর সংখ্যা প্রথমবারের মতো ২০ লাখ ছাড়িয়েছে।
ইউরো অঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত নয়, এমন দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য-সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হস্তক্ষেপের নিরসন চায় ব্রিটেন। তাদের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণবিহীন সম্পর্কের মধ্য দিয়ে লন্ডনের জন্য বিশেষ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায় দেশটি। গার্ডিয়ান জানায়, এতে ফ্রান্সের আপত্তি রয়েছে।
অন্যদিকে শিশু ভাতা ও অভিবাসীদের কর্মকালীন ভাতা প্রদানের উপর কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাব নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে ইউরোপের পূর্বাঞ্চলীয় দেশগুলো। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের আধিক্য নিয়ে ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে এক ধরণের অস্বস্তি রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম অনুযায়ী ইইউভুক্ত ২৮টি দেশের নাগরিক ভিসা ছাড়াই এক দেশ থেকে আরেক দেশে প্রবেশ করতে পারে। আর সেকারণে গত মেয়াদে ক্যামেরন সরকার ইইউর বাইরের দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে সক্ষম হলেও ইইউভুক্ত নাগরিকদের প্রবেশ ঠেকাতে পারেনি। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এবারের মেয়াদে ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে আগমন নিরুৎসাহিত করতে চার বছরের জন্য সুবিধা ভাতা বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেন ক্যামেরন। তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ইইউভুক্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। তাদের দাবি, সদস্য দেশের নাগরিকদের সুবিধা ভাতা প্রদানে বৈষম্য করা হলে তা হবে ইইউর প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক।
অন্যদের বিরোধিতা থাকলেও ক্যামেরনের বেশিরভাগ দাবিকে যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল।
শুক্রবার ইইউ দেশগুলোর মধ্যে যদি সমঝোতা হয় তবে জুনে ইইউতে যুক্তরাজ্যের থাকা না থাকার প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গার্ডিয়ানের মতে, গণভোটে যদি ক্যামেরন হেরে যান তাহলে তার পদত্যাগের দাবি উঠতে পারে। আর যদি জিতে যান তবে তাকে পরিবর্তন আনয়নকারী প্রধানমন্ত্রীদের তালিকায় রাখবেন তার সমর্থকরা। সূত্র: বিবিসি, গার্ডিয়ান
/এফইউ/বিএ/