পুতিনকে হত্যার জন্যই কি ক্রেমলিনে ড্রোন হামলা, নাকি রুশ প্রচারণা?

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত নেতাদের একজন বলে মনে করা হয়। মস্কোতে পুতিনের সমাবেশে অত্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ব্যাপক তল্লাশির পাশাপাশি আশপাশে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকে তখন।

এ কারণে ক্রেমলিনের দাবি সত্য হলে প্রেসিডেন্ট পুতিনের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন প্রশ্নের জন্ম দেবে। বিমান প্রতিরক্ষার কার্যকারিতা নিয়েও নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে রাশিয়াকে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মস্কোর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবনের ছাদে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন হতে দেখা গেছে। রাশিয়া আশঙ্কা, বিমান হামলার শিকার হতে পারে মস্কো।   

অনলাইনে প্রচারিত অযাচাইকৃত ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বুধবার ক্রেমলিনের ওপর দিয়ে ধোঁয়া উঠছে। আরেকটি ভিডিও-তে সিনেট ভবনের ওপর ছোট একটি বিস্ফোরণ হয়েছে, দু’জন লোক সেখানে উপস্থিত আছেন।  

রুশ প্রেসিডেন্সি বলছে, ক্রেমলিনে পুতিনের বাসভবনে হামলার চেষ্টা করেছে ইউক্রেন। এটিকে পরিকল্পিত সন্ত্রাসী কাজ এবং প্রেসিডেন্টকে হত্যার প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করেছে ক্রেমলিন।

রুশ কর্মকর্তারা বলেছে, দুটি ড্রোন ইলেকট্রনিক রাডারের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন কমপ্লেক্সে ছিলেন না।

 

কথিত ড্রোন হামলার ভিডিও টেলিগ্রামে প্রকাশ হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

 

এ অভিযোগ মানতে নারাজ ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, ইউক্রেন ভূখণ্ডে ব্যাপক হামলার বিষয়টিকে বৈধতা দিতে এমন গল্প ফাঁদছে মস্কো। আর যুক্তরাষ্ট্র বলছে, রাশিয়ার দাবিগুলোকে অনেক সতর্কতার সঙ্গে খতিয়ে দেখছে ওয়াশিংটন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় লড়াই করছে ইউক্রেনীয় সেনারা।

ফিনল্যান্ড সফরে তিনি বলেন, ‘আমরা পুতিন বা মস্কো আক্রমণ করিনি। আমরা কেবল আমাদের ভূখণ্ডে যুদ্ধ করছি। আমরা আমাদের গ্রাম ও শহর রক্ষা করছি’।

 

 

এখন প্রশ্ন হলো বুধবারের সকালের ঘটনায় রাশিয়া কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। কিছু কর্মকর্তা ইতোমধ্যে কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। রুশ ভূখণ্ডে যে কোনও হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি বহুবার দিয়েছেন রাশিয়ান জেনারেলরা। তবে অর্থপূর্ণ প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর ক্ষমতা রাশিয়ার আছে কি না বা এই ঘটনা ইউক্রেনের অভ্যন্তরে যুদ্ধক্ষেত্রে কোনও প্রভাব ফেলবে কি না তা স্পষ্ট নয়।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে বড় পরিসরে সন্ত্রাসী উসকানির প্রস্তুতি নিচ্ছে... এই ঘটনাটি তার ইঙ্গিত দেয়।

তিনি বলেন, ‘মস্কোতে হামলা ইউক্রেনের জন্য কোনও অর্থবহ নয়। এটা বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে নিজেদের হামলার ন্যায্যতা দিতে রাশিয়াকে সাহায্য করবে’।

ইউক্রেনের দক্ষিণে খেরসন অঞ্চলে বুধবার রুশ হামলায় ২১ জন নিহত হয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, হামলায় একটি রেলওয়ে স্টেশন, একটি বাড়ি, একটি হার্ডওয়্যারের দোকান, একটি সুপারমার্কেট এবং একটি গ্যাস স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে সুপারমার্কেটের ক্রেতা এবং একটি এনার্জি কোম্পানির কর্মচারীরা রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

পোডোলিয়াক বলেন, ‘ক্রেমলিনের ওপর ইউক্রেনের ড্রোনের ঘটনা বাদ দিলেও রাশিয়ান ফেডারেশনে অবশ্যই কিছু ঘটছে’।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, রাশিয়ার অভিযোগকের সত্যতা সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত নন। বিষয়টি অবশ্যই যাচাই করা হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপ-সহকারী প্রতিরক্ষা সচিব এবং সিআইএ কর্মকর্তা মিক মুলরয় বলেছেন, যদি ঘটনা সত্য হয় তবুও সেখানে হত্যা প্রচেষ্টার কোনও লক্ষ্য ছিল না। কারণ পুতিনের গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট। আর ঘটনার সময় পুতিন মস্কোতে ছিলেন না।

তিনি বলেন, ‘রাশিয়ান জনগণকে দেখানোর জন্য এটি হতে পারে। রুশ সরকার হয়তো জনগণকে এটা বিশ্বাস করাতে যায় যে ইউক্রেন যে কোনও স্থানে হামলা চালাতে পারে। মানে যুদ্ধের পক্ষে সাধারণ মানুষের সমর্থন পেতে চাইছে ক্রেমলিন’।

মুলরয় আরও বলেন, ‘এমনও হতে পারে যে রাশিয়া হয়তো প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে টার্গেট করার অজুহাত হিসেবে এ ঘটনাকে ব্যবহার করতে চাইতে পারে।  আগেও তারা এমন চেষ্টা করেছে’।

রাশিয়া বলছে, ড্রোন হামলার ঘটনাটি ৯ মে মস্কোতে রাশিয়ার বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের কিছু আগে ঘটে। আয়োজনে বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

রাশিয়ান কর্মকর্তারা জানায়, কুচকাওয়াজ পরিকল্পনা অনুযায়ী হবে। মস্কোর মেয়র বুধবার শহরের ওপর দিয়ে অননুমোদিত ড্রোন ফ্লাইট নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। বেশ কয়েকটি রাশিয়ান শহর ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে তারা এ বছরের বিজয় দিবস উদযাপন পিছিয়ে দেবে। রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ এই পরিবর্তনের জন্য নিরাপত্তা এবং ইউক্রেনপন্থী বাহিনীর হামলাকে দায়ী করেছেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়ায় বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনা ঘটেছে।

সূত্র: বিবিসি