রিজার্ভ চুরিতে ব্যবহৃত ফিলিপাইনের ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্ট ভুয়া!

আরসিবিসি ব্যাংকের আইনি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান ম্যাকেল এস্তাভিলোযুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের ব্যাংকে সে দেশের ব্যবসায়ী উইলিয়াম গো’র যে একাউন্টটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি আসল অ্যাকাউন্ট নয়; রিজাল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাতে এই দাবির কথা জানিয়েছে ফিলিপাইনের সংবাদমাধ্যম ইনকোয়ারার। তবে এরআগে  সন্দেহভাজন ব্যাংক ম্যানেজার মাইয়া সান্তোস দিগুইতোর আইনজীবী ফার্দিনান্দ তোপাসিও অভিযোগ করেন, আরসিবিসি হেড অফিস কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তাদের বাঁচাতে বিষয়টিকে ধামা-চাপা দিতে চাইছে। আরসিবিসি-র অভ্যন্তরীণ তদন্তের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তার আইনজীবী বলেন, ‘এখানে ন্যায় বিচার সম্ভব নয়। আরসিবিসি-তে কেবল মাত্র আমার মক্কেলকেই সাসপেন্ড করা হয়েছে।’
তবে বৃহস্পতিবার আরসিবিসি ব্যাংকের আইনি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান ম্যাকেল এস্তাভিলো সিনেটে ব্লু রিবন কমিটির শুনানিতে দাবি করেছেন, জুপিটার স্ট্রিটে আরসিবিসির মাকাতি শাখার ব্যবস্থাপক মাইয়া সান্তোস দিগুইতো ব্যবসায়ী উইলিয়াম গো’র অ্যাকাউন্টকে সঠিক এবং যথাযথ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তবে আরসিবিসি ব্যাংক অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে দেখেছে, গো’র নামে ২০১৪ সালে খোলা একটি ফিলিপাইনি মুদ্রার অ্যাকাউন্ট এবং ২০১৬ সালে খোলা একটা ডলার অ্যাকাউন্ট আসলে ভুয়া। এগুলোতে গো’র নকল স্বাক্ষর ব্যবহৃত হয়েছে। অ্যাকাউন্ট দু’টিতে ব্যবহৃত গো’র ঠিকানাও ভুয়া বলে দাবি করেছেন ম্যাকেল এস্তাভিলো।
ম্যাকেল এস্তাভিলো দাবি করেন, ৫ ফেব্রুয়ারি ওই অ্যাকাউন্ট খোলা হলেও মাকাতি শাখার ব্যবস্থাপক মাইয়া সান্তোস দিগুইতোর মাধ্যমেই ২২ অথবা ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ী গো বিষয়টি জানতে পারেন। গো’কে দিগুইতো জানিয়েছিলেন, ফিলরেম নামের এক ফরেন এক্সচেঞ্জ কোম্পানির একটি কোম্পানি-একাউন্ট দরকার ছিলো, ব্যক্তিগত নয়। এই অ্যাকাউন্ট খোলার কারণে ব্যবসায়ী গো’র কাছে দিগুইতো ক্ষমাও চেয়েছেন বলে সিনেট কমিটির কাছে দাবি করেছেন আরসিবিসি ব্যাংকের আইনি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান। তার দাবি, ওই ডলার অ্যাকাউন্ট থেকেই ২০ মিলিয়ন ফিলিপাইনি মুদ্রা উঠিয়ে তা নিজের গাড়িতে নিয়ে পালিয়ে যান দিগুইতো।

 

nonameতবে সিনেট শুনানিতে দিগুইতোর আইনজীবী ফার্দিনান্দ তোপাসিও বলেন, ‘এখানে এক ষড়যন্ত্র চলছে। বিত্তশালী, শক্তিশালী এবং যাদের বড় বড় যোগাযোগ আছে, তারা এর সাথে জড়িত। তবে আমরা মনে করি সিনেট কমিটি সঠিক তদন্ত করতে সক্ষম হবে।’ তিনি অভিযোগ করেন, ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) সঙ্গে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) যোগসাজশ রয়েছে। কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তাকে বাঁচাতে বিষয়টিকে ধামা-চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। আরসিবিসি-র অভ্যন্তরীণ তদন্তের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এখানে ন্যায় বিচার সম্ভব নয়। আরসিবিসি-তে কেবল মাত্র আমার মক্কেলকেই সাসপেন্ড করা হয়েছে।’
এর আগে তোপিসিও  বলেন, ‘উইলিয়াম গো প্রচারমাধ্যমের সামনে যা বললেন এবং আরসিবিসি ব্যবস্থাপকরা যেভাবে প্রচারমাধ্যমকে দিগুইতোর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে ব্যবহার করেছেন, তার ফলে এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হলো যে, তান ব্যাংক প্রেসিডেন্টের পদে থাকলে তিনি পদাধিকারবলে ব্যাংকের যে কোনও দলিল বা ইমেইল পরিবর্তন বা মুছে দিতে পারেন। যেখানে তান নিজেই সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন আর অভ্যন্তরীণ তদন্ত এখনও সম্পন্ন হয়নি, সেখানে তাকে আরসিবিসি-র প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রাখাটা অবাক করার মতো বিষয়।’  
উল্লেখ্য, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরো সিস্টেম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখার ৪টি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন। সূত্র: সিএনএন, ইনকোয়ারার।

/বিএ/