বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি

ইনকোয়ারারের সম্পাদকীয়তে ফিলিপাইনের অর্থব্যবস্থার কড়া সমালোচনা

nonameবাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনা ফাঁস করে দেওয়া আলোচিত ফিলিপাইনের সংবাদমাধ্যম ইনকোয়ারার তাদের শুক্রবারের সম্পাদকীয়তে ফিলিপাইনের অর্থব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছে।
পত্রিকাটির সম্পাদকীয় ভাষ্যে বলা হয়েছে, ফিলিপাইনের ব্যাংক গোপনীয়তা আইন খুবই কঠোর। এজন্যই অর্থব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ধারণা যে, ফিলিপাইনের বিচারপ্রক্রিয়ায় অর্থ সংক্রান্ত বেআইনী কাজকর্মের কোন প্রমাণ মেলে না। এটা নিছকই একটা ধারণাই ছিলো। তবে এবার ধারণাটা সত্যে পরিণত হয়েছে। ফিলিপাইনের অর্থ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ মূল্যের অর্থ চুরির ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে, ফিলিপাইনের অর্থব্যবস্থা কালো টাকার প্রবাহকে থামাতে পারে না!
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থচুরিতে ফিলিপাইনের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে কাজে লাগানোর ঘটনা বিষ্ময়কর কিছু নয়। এতে বলা হয়েছে, ক্যাসিনোকে অ্যান্টি মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের বাইরে রাখা হয়েছে উচ্চবিত্তদের সুবিধার্থে। তবে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ক্যাসিনোকে এককভাবে দায়ী করতে নারাজ ইনকোয়ারার। তাদের দাবি, ক্যাসিনো আসল সমস্যা নয়, আসল সমস্যা হলো ফিলিপাইনের অর্থব্যবস্থার ফাঁকফোকর, যার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধীরা তাদের কালো টাকা ক্যাসিনোতে বিনিয়োগ করতে পারে।

 

সম্পাদকীয়তে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, আপাতদৃষ্টিতে এটা মনে হতে পারে, রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার দিগুইতোই এই ঘটনার মূল হোতা, কিন্তু আসলেই কি তাই? নাকি তিনি প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে ঊর্ধ্বতনদের সহায়তা পেয়েছিলেন? ইনকোয়ার বলছে, এমন হতে পারে যে কোনও একক ব্যক্তি এই চুরির ঘটনা ঠেকিয়ে দিয়েছেন, আবার এমনও হতে পারে কেবল একজন ঘুমোচ্ছিলেন বলে অথবা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় দুর্বলতা থাকার কারণে এমনটা হয়েছে। সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়েছে, যদি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দুর্বলতা থাকে তাহলে সেই দায় ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সেখানকার অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলকে (এএমএলসি) নিতে হবে। কেননা ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দেখভাল করার দায়িত্ব এই দুই প্রতিষ্ঠানের।

সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, কালো টাকা ও অর্থপাচার রোধে ২০০১ সালে অ্যান্টি মানি লন্ডারিং আইন করা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ওই আইন অ্যাসিড টেস্টে ফেল করেছে। এ ঘটনায় ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বিএসপি) এবং অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল যথাযথ সময়ে যথাযথ অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে সম্পাদকীয়তে। এতে বলা হয়েছে, ফিলিপাইনের পুরো অর্থব্যবস্থা অ্যাসিড টেস্টে ব্যর্থ হয়েছে।

এই ঘটনার পর ছোট-বড় সব ব্যাংক, ব্যাংকের সিইও থেকে অধস্তন, ক্যাসিনো, মানি চেঞ্জার, অর্থ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিশেষত কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং  অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল সবাইকে নিজেদের দুর্বলতা নিয়ে ভাবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে সম্পাদকীয়তে। অর্থ ব্যবস্থায় সংস্কার আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এতে। সূত্র: ইনকোয়ারার

/বিএ/