গোলাপি অটো রিকশায় নারীর আত্মবিশ্বাস

গোলাপি রংয়ের অটো চালাচ্ছেন হরিয়ানার এক নারী‘ডায়াবেটিসের কারণে দীর্ঘস্থায়ী হাড়ের রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০‌১২ সাল থেকে আমার স্বামী শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। স্বামী ছাড়াও পরিবারে আমার দুটো সন্তান আর শাশুড়ি রয়েছেন। কিভাবে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ি। এমন সময় এক বিজ্ঞপ্তি দেখে আমি অটো রিকশার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলাম এবং গাড়িচালক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিলাম। আজ আমি পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছি।’
অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসের সুরে কথাগুলো বলছিলেন মিনা নামের ২৭ বছর বয়সী এক ভারতীয় নারী। হরিয়ানার এ নারী পেশায় একজন গাড়িচালক। কেবল মিনাই নন, গাড়ি চালনা পুরুষের পেশা বলে সমাজে যে ধারণা ও বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে তা ভেঙে দিয়ে এ পেশাকেই জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ভারতের হরিয়ানার বেশ কয়েকজন নারী। গত বছরের ৪ মে থেকে রোহটাকের রাস্তায় ২১টি গোলাপি রংয়ের অটো রিকশা চালাচ্ছেন নারীরা। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের মুখে তারা তুলে দিতে পারছেন দু মুঠো খাবার।
স্নাতক ডিগ্রিধারী মিনা জানান, প্রতিদিন তিনি এক হাজার থেকে দেড় হাজার ভারতীয় রুপি আয় করেন।
গাড়ি চালনার সময় পুরুষদের কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া আসলে কী জবাব দেন এমন প্রশ্নের উত্তরে সুমিত্রা দেবি নামের আরেক নারী গাড়িচালক বলেন, ‘আমি তাদের বলি, হয় আমার পরিবারের সদস্যদের খাওয়াও, খরচ যোগাও আর না পারলে দূরে যাও।’

 

শুরুতে শিশু আর নারীরাই ছিলেন এসব অটোর যাত্রী৩৭ বছর বয়সী সুমিত্রা জাঠ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত। বর্ণ নিয়ে তার কথা শুনতে হয় কিনা কিংবা কিভাবে সামলান এমন প্রশ্নের জবাবে সুমিত্রা বলেন, ‘আমি বলি, ভাই জাতের কথা তুলবেন না। এগুলো আমরা অনেক দেখেছি।’
সুমিত্রারও ১৫ ও ১৭ বছর বয়সী দুটি সন্তান রয়েছে। তার স্বামীও দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত।
রোহটাক পুলিশ আর সড়ক নিরাপত্তা সংস্থার (আরএসও) যৌথ উদ্যোগে গত বছর গোলাপি রংয়ের অটো চলাচল শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে কেবল নারী আর শিশুদের বহনের নিয়ম করা হলেও এখন পরিবারের সদস্যরা সঙ্গে থাকলে পুরুষরাও এসব অটোতে চলাচল করতে পারছেন।
উদ্যোগের সূচনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আরএসও’র সমন্বয়ক রাজেশ কুমার বলেন, ‘নারী যাত্রীদের হয়রানি ঠেকাতে অটোগুলো চালু করা হয়। শুরুতে আমরা বিষয়টি এসএসপি শশাঙ্ক আনন্দকে জানাই। তিনি আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে বলেন। এরপর আমরা আবেদনপত্র আহ্বান করি এবং ২১টি অটো বরাদ্দ দিই। শিগগিরই আমাদের আরও ২০টি অটো রাস্তায় নামানোর কথা রয়েছে। আবেদনপত্রের ফর্মে আমরা ইচ্ছে করে বর্ণের কলামটি পরিহার করেছি।’ সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
/এফইউ/বিএ/